পটুয়াখালীতে গণঅধিকার পরিষদ-বিএনপির সংঘর্ষ, আহত-১০

আসাদুল্লাহ হাসান মুসা, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ- পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের বাজার এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিবেশ। স্থানীয় গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এক সংঘর্ষ শুরু হয় এই সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। রাজনৈতিক আধিপত্য, বাজারের দোকান বরাদ্দ এবং ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
১২ জুন বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে চরবিশ্বাস বাজারে একটি আলোচনা সভা চলাকালীন দুই দলের মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, মুহূর্তের মধ্যেই পুরো বাজার এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক দোকানপাট তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা, অনেকে নিরাপত্তার আশঙ্কায় এলাকা ছেড়ে চলে যান।
ঘটনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উঠে এসেছে বাজারে দোকান বরাদ্দ (চান্দিনা ভিটি) নিয়ে দীর্ঘদিনের জটিলতা। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ইউনিয়ন বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা—সভাপতি বাকের বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান—প্রতি দোকানের জন্য ৩০ হাজার টাকা করে ঘুষ দাবি করছিলেন ডিসিআর পাইয়ে দেয়ার নামে। যা সরকার নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় অনেক বেশি।
গণঅধিকার পরিষদের নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের গ্রামের বাড়ির সামনে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। তার ছোট ভাই আমীনুল ইসলাম নূর দাবি করেন, ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত অর্থ আদায় নিয়ে ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। ১০ জুন ভিপি নুর নিজ এলাকায় গেলে দোকানদাররা তার কাছে অভিযোগ করেন। তখন তিনি অতিরিক্ত টাকা না দিতে পরামর্শ দেন এবং ডিসিআর প্রসেস প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। এর পর থেকেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
বিএনপির পক্ষ থেকে ভিন্ন অভিযোগ তুলে চরবিশ্বাস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান জানান, তারা একটি শান্তিপূর্ণ কর্মীসভা করছিলেন। সেই সময় ভিপি নুরের ভাই আমীনুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা সভা বন্ধ করতে বলে। তারা সভা বন্ধ করলেও পরে গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা চড়াও হয়ে মারমুখী আচরণ শুরু করে। চেয়ার ছুড়ে মারাসহ অন্তত ৮–১০ জন নেতাকর্মী এতে আহত হন বলে দাবি করেন তিনি।
অপরদিকে, টাকা আদায়ের অভিযোগকে অস্বীকার করে মজিবুর রহমান জানান, “আমরা কারও কাছ থেকে টাকা নিইনি। বরং ভিপি নুরের আত্মীয় এনিম ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিলে অর্থ সংগ্রহ করেছেন, এখন এর দায় আমাদের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। ভিপি নুর তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “এলাকার মানুষের ভালোবাসায় আওয়ামী লীগের লোকেরাও আমাদের স্পর্শ করতে সাহস পায়নি। অথচ আজ বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হাসান মামুনের নির্দেশে চরিত্রহীন, লম্পট বাকের বিশ্বাসের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনও পাল্টা অভিযোগ তুলে তার ফেসবুকে লিখেছেন, “চরবিশ্বাস ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের ইন্ধনে গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা আমাদের কার্যালয়ে হামলা চালায়। এতে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা আহত হন।”
ঘটনার বিষয়ে জানতে গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশাদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নম্বরটি ব্যস্ত পাওয়া যায়। এ বিষয়ে পুলিশ আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি এখনো।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘর্ষ শুধুই একটি তুচ্ছ ঘটনা নয়—এটি বৃহত্তর রাজনৈতিক বিভাজন এবং মনোনয়ন রাজনীতির প্রতিচ্ছবি। চান্দিনা ভিটির ঘুষ অভিযোগ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা—সব মিলে এক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে চরবিশ্বাসের বাজারে।