শিক্ষাঙ্গন

পরীক্ষার হলে ভর্তিযোদ্ধা, বাইরে অপেক্ষায় অভিভাবকরা

মিজানুর রহমান, ইবি প্রতিনিধি:

রোদেলা সকালের নরম আলোয় শুরু হয়েছে স্বপ্নের এক যুদ্ধ। আজ দেশের ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে শুরু হয়েছে “সি” ইউনিটের (বাণিজ্য) ভর্তি পরীক্ষা। এর মধ্যে অন্যতম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে “সি” ইউনিটে অংশ নিয়েছে ১২৬০ জন পরীক্ষার্থী। কেউ এসেছে দূর-দূরান্ত থেকে, কেউ পাশের জেলা থেকে—তাদের সবার চোখে একটাই স্বপ্ন: প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আসন।

এই পরীক্ষাটা তো শুধু পরীক্ষা নয়, এ যেন এক দীর্ঘ প্রস্তুতির চূড়ান্ত যুদ্ধ। কত রাত পার হয়েছে নির্ঘুম, কত সকাল শুরু হয়েছে চোখের নিচে কালো ছায়া নিয়ে। মোবাইলের পর্দা থেকে মুখ ফিরিয়ে, ঘুমকে হার মানিয়ে, ক্লান্তিকে পাশ কাটিয়ে তারা নিজেদের আটকে রেখেছিল বইয়ের পাতায়। আশার ডানায় চড়ে ওরা স্বপ্ন দেখেছে। আজ সেই স্বপ্নকে ছুঁতে তারা এসেছে কলম হাতে, বুকভরা সাহস নিয়ে।

পরীক্ষার হলে যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র। চুপচাপ মুখ, ভ্রু কুঁচকে ভাবা, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা—সব মিলিয়ে এক অন্যরকম দৃশ্য। আসন সীমিত, কিন্তু প্রতিযোগী অসংখ্য। এই অসম যুদ্ধেও হাল ছাড়েনি কেউ, কারণ তারা জানে—জয় ছাড়া বিকল্প নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অপেক্ষমাণ একঝাঁক মানুষ, তাদেরই প্রিয়জন। মা, বাবা, ভাই, বোন কিংবা মামা-চাচা—কেউ এসেছে সন্তানকে সাহস দিতে, কেউ এসেছে সন্তানকে নিরাপদে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিতে। কারও চোখে অজানা আশঙ্কা, কারও ঠোঁটে সান্ত্বনার হাসি। কেউ প্রার্থনায় ডুবে গেছে, কেউ আবার অন্য অভিভাবকের সঙ্গে মিশে গেছে কথোপকথনে—তাদের সন্তানদের সংগ্রাম নিয়ে।

কথা হয় ফরিদপুর থেকে আসা এক অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি এসেছেন তার ভাইঝিকে নিয়ে। বলেন, “ওর বাবা নেই। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করছে। আমি চাই সে ভর্তির সুযোগ পাক।” তার কণ্ঠে আশাবাদের ঝলক, চোখে গর্বের দীপ্তি। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ভালো লেগেছে, তবে আরো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলে আরও ভালো হতো।”

মাগুরা থেকে আসা এক মা জানালেন, “আমার ছেলে এর আগে ঢাকা, রাজশাহী—অনেক জায়গায় পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু এখানকার পরিবেশ অন্যরকম। নিরিবিলি, শান্ত, সুশৃঙ্খল। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে। আমাদের বসার ব্যবস্থা করেছে ও খাবার পানি দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই এই সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য।” তার কণ্ঠে কৃতজ্ঞতা আর সন্তুষ্টির সুর।

একজন বাবা জানালেন, তার মেয়ে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তার কাছে ভালো লাগে। “বাসা থেকেও কাছাকাছি, পরিবেশও ভালো। সুযোগ পেলে এখানেই ভর্তি করাবো,” বলেন তিনি গর্বভরে।

চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা আরেক অভিভাবক জানালেন, “আমার ছোট বোন পরীক্ষায় বসেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা চমৎকার, তবে আমাদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেওয়ায় একটু খারাপ লেগেছে। অভিভাবকদের জন্য আলাদা কর্নার, ফ্যান, শৌচাগারের ব্যবস্থা ভালো লেগেছে।”

সব কথার মাঝেই উঠে আসে একটা সাধারণ অনুভব—আশা। সন্তানের সফলতা দেখার আশা, তাদের ভবিষ্যতের ভরসা হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা। এই পরীক্ষা শুধু একটা ভর্তি পরীক্ষা নয়—এ এক পরিবারের স্বপ্নের বাস্তব রূপ। এ যুদ্ধ শুধু একজন ছাত্রের নয়, এ এক গোটা পরিবারের সংগ্রাম।

আজকের এই দিন- পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রতিটি মুহূর্ত—একদিন স্মৃতি হয়ে থাকবে তাদের জীবনে। জয় হোক বা না হোক, তারা যে স্বপ্ন দেখতে শিখেছে, সেটাই বড় পাওয়া। আর যারা আজ এই যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে, তারাই তো আগামীর বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। তাদের লড়াই, তাদের স্বপ্ন, একদিন সত্যিই আলোকিত করবে এই দেশকে।

You may also like

Uncategorized শিক্ষাঙ্গন

নাজিরপুরে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

পিরোজপুর প্রতিনিধি :বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি অন্যতম সদস্য, বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ
Uncategorized শিক্ষাঙ্গন সারাদেশ

পিরোজপুর ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতবিনিময়

পিরোজপুর প্রতিনিধি: ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্যের পিরোজপুরে আগমন উপলক্ষে সংবর্ধনা, আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে পিরোজপুর