ফসলি জমির মাটি কেটে রমরমা ব্যবসা।

মো: রাজন পাটওয়ারী, স্টাফ রিপোর্টার চাঁদপুর:
চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নে আবাদি জমির মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমি। প্রভাবশালীরা আইনের তোয়াক্কা না করেই অবাধে চালাচ্ছে এ মাটির ব্যবসা। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিকরা মাটি বিক্রিতে অস্বীকার করলে, তাদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে। এসব মাটি ব্যবসায়ী স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই কৃষকরা লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।
এতে যেমন ফসল ফলানোর জায়গা কমে যাচ্ছে, তেমনি ঝুঁকিতে পড়ছে ব্রিজ, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি। ফসলি জমিতে এক্সকাভেটর (ভেকু) বসিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। এসব মাটি ডাম্প ট্রাক ও সড়কে নিষিদ্ধ কাকড়া ট্রাক দিয়ে ক্রেতার কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে কৃষিজমির পাশাপাশি গ্রামীণ এবং পাকা রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের টাকার লোভ দেখিয়ে ফসলি জমিতে ভেকু দিয়ে ও কাকড়া ট্রাক দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন বিভিন্ন বাড়ি-ভিটে, পুকুর ভরাটে এবং ইটভাটায়। নির্বিচারে চলছে মাটি কাটা। এভাবে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে যেমন ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে এলাকার ঘরবাড়ি। তেমনি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। এছাড়া মাটিবোঝাই ভারী ডাম্প ট্রাক চলার কারণে ধুলোবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
৭ নং ইউনিয়ন পাইকপাড়া ৭ নং ওয়ার্ড, পাইকপাড়া গ্রামের স্থানীয় পরান পাটওয়ারী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই অন্যান্য ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীরা আমাদের গ্রামে ও বিভিন্ন ইউনিয়নের অনুমোদন বিষয় বিভিন্ন এলাকার তিন ফসলি কৃষিজমিতে খননযন্ত্র (ভেকু) বসিয়ে মাটি কেটে স্থানীয় বসতবাড়ি ভরাটের কাজ করে আসছেন। অন্যের ফসলি জমির ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্য বানানো হয়েছে রাস্তা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বাধা দিলে নানা হুমকি-ধমকি ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
জেলা কৃষি অধিদপ্তর মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, মাটির টপ সয়েল কেটে নেওয়ার ফলে কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে নালা অথবা জলকড়া জমিতে পরিণত হচ্ছে। নির্বিচারে যেভাবে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ফসলি জমি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে। কমে যাবে ফসল উৎপাদন।
৭ নং পাইকপাড়া ৭ নং ওয়ার্ড, পাইকপাড়া গ্রামের ফাতেমা বেগম বলেন, পাশের জমির মালিক মাটি বিক্রি করেছেন। এই মাটি নেওয়ার জন্য আমাদের ফসলি জমি নষ্ট করেই নেওয়া হচ্ছে ভেকু ও ডাম্প ট্রাক। বাধা দিলে মাটি ব্যবসায়ীরা বলেন, ফসল তো নষ্ট হয়েছে। এখন জমির মাটি বিক্রি করে দেন।
১৫ নং রূপসা ইউনিয়ন ৫ নং কোমরকান্দি গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, আমার বাড়ির সামনে রাস্তা। এই রাস্তা স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় মেরামত করা হয়েছে। মাটিবোঝাই ভারী ট্রাক চলাচলে রাস্তাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এবং আমাদের ফসলি জমির ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্য বানানো হয়েছে রাস্তা। ঐ গ্রামের জাকির হোসেন ও সাধারণ জনগণ বলেন। এই রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলাচলে বাধা দেওয়ায় আমাদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং জোর করেই রাস্তা নষ্ট করে ট্রাক চালানো হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ী আবু ইউসুফ বলেন প্রশাসনের অনুমোদন নিয়েছে। তাই আমাদের সাধারণ জনগণকে প্রশাসনের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়।
১৫ নং রূপসা ইউনিয়ন ৫ নং ওয়ার্ড কোমরকান্দি গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী আবু ইউসুবের সাথে সাংবাদিকরা কথা বলেন, মাটি ব্যবসায়ী আবু ইউসুফ বলেন, বিভিন্ন বাড়ি-ভিটে, পুকুর ভরাটে এবং ইটভাটায় ফসল জমি মাটি বিক্রি করেন এবং দিচ্ছি। তিন ফসলি জমি কেউ বিক্রি করতে চাইলে আমি কিনি। আমি জোর করে কারো জমিতে মাটি কাটি না। প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই কীভাবে ম্যানেজ করে মাটি বিক্রি করা যায়, তা আমার জানা আছে। আমি এ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাবে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেছি। এবং কি আমি। ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া সাথে কথা বলে ম্যানেজ করেছি ও কৃষি জমি মাটি কাটার অনুমোদন নিয়েছি।
মাটি ব্যবসায়ী আবু ইউসুফের কৃষি জমি মাটি বিক্রির অনুমোদন বিষয়, সাংবাদিক রাজন পাটওয়ারী ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া সাথে, কথা বলেন, অনুমোদন বিষয় জানতে চায়। তিনি বলেন অনুমোদনের বিষয় জানেন না। তিনি বলেন এই বিষয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে অনুমোদন লাগে। এছাড়া ঐ ছোট সড়ক দিয়ে ডাম্প ট্রাক চলাচল করার নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। এর আগে কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা এবং ড্রেজার দিয়ে যারা বালু উত্তোলন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কৃষিজমি থেকে যারাই মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।