ফেনীর তরুণনা হচ্ছে লোকাল হিরো-সেচ্ছাসেবী সংগঠন আল আমিন সোসাইটি।

মশি উদ দৌলা রুবেল ফেনী:
ফেনীর পরশুরামের দিক থেকে হুহু করে ছুটে আসছিল পানি।এমন খবর পেয়েই সোনাগাজী উপজেলার মহদিয়া ও নাজিরপুরসহ নবাবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রস্তুতি নিতে থাকে স্থানীয় তরুনরা।সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে তারা শুরু করে মসজিদ,মাদ্রাসা,স্কুলসহ দ্বিতল ভবনগুলোকে মানুষের থাকার উপযোগী করে তোলার কাজ।টাকার তোয়াক্কা না করে বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে তারা সংগ্রহ করেন চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী।প্রস্তুতি শেষ হওয়ার আগেই এখানেও হাটু পেরিয়ে যায় পানি।ভেলা বানিয়ে সেই পানিতে গ্রামের শিশু,বৃদ্ধ ও দুর্বলদের নিয়ে আসেন তাদের তৈরি করা অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে।বানের পানি নামার পূর্ব পর্যন্ত এইসব আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যা দুর্গতদের রেখে খাবারসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুর আঞ্জাম দেন এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিছু শিশু-কিশোর।বন্যা মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ নবাবপুর ইউনিয়নের এমন অর্ধশত তরুণ এবং ৫টি সামাজিক সংস্থাকে লোকাল হিরো হিসেবে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার শ্রেষ্ট সমাজসেবী সংগঠন হিসেবে পুরস্কারপ্রাপ্ত সামাজিক সংস্থা আল আমিন সোসাইটি।শনিবার(২২ ফেব্রুয়ারি)সন্ধ্যায় সংস্থাটি আয়োজিত ৩৩তম তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে এইসব ব্যক্তি ও সংস্থার হাতে সার্টিফিকেট ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।আল আমিন সোসাইটির সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজসেবক কাজী মাওলানা এরশাদ উল্যাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মাওলানা নূরুল আবসারের সঞ্চালনায় সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে আল আমিন ইসলামী পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা লকিয়ত উল্যাহ চৌধুরী,আল আমিন সোসাইটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা নূরুল হক,সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এবং আল আমিন ইয়ুথ সোসাইটির সদস্য সচিব সোহাগ চৌধুরীসহ স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সংগঠনগুলো হলো-মহদিয়া ইয়াং স্টার ক্লাব,স্পর্শ সমাজ কল্যাণ সংস্থা,মানবসেবা সংস্থা ফেনী,আল ফালাহ ফাউন্ডেশন এবং বাতিঘর লাইব্রেরি ও ফাউন্ডেশন।এওয়ার্ড প্রদানের বিষয়ে আল আমিন সোসাইটির সভাপতি এরশাদ উল্যাহ চৌধুরী বলেন,গেল আগস্টের বন্যায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে ফেনীর বানভাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।আমরা ফেনীবাসী তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।তবে নিঃসন্দেহে সবার আগে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে এলাকার তারুণ্যকে।তারাই প্রথম এই দুর্যোগ থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে।পরে অন্যরা এসে তাদের সহযোগী হয়েছে।আমি মনে করি এরা আমাদের লোকাল হিরো এবং এরাই আসল হিরো।তিনি আরও বলেন,সে সময় এরা যে সাহসী উদ্যোগ নিয়ে এত মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে আমাদের উচিত এই তরুণদের এপ্রিসিয়েট করা।সেই চিন্তা থেকে আমরা তাদের সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।কিন্তু নানান সীমাবদ্ধতায় সেটি এতদিন সম্ভব হয়নি।আজ মাহফিল উপলক্ষে এলাকার সবাইকে নিয়ে তাদের এই অবদানের জন্য সামান্য স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করেছি।তবে তারা যে অবদান রেখেছে সেই তুলনায় এই স্বীকৃতি খুবই সামান্য।আমরা মনে করি এরা আমাদের গর্বের উৎস।এদিকে সংস্থাটির আয়োজিত ৩৩ তম তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে আলোচনা করেন,বাংলাদেশ মজলিসুল মুফাসসিরীনের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহকারী মহাসচিব মাওলানা ফখরুদ্দিন আহমদ।এতে বিশেষ বক্তা ছিলেন ফেনী আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসার ফকিহ্ মুফতি মাওলানা আব্দুল হান্নান,ঢাকার দাসেরকান্দি দারুসসুন্নাহ আলিম মাদ্রাসার একাডেমিক ইনচার্জ ড.মো.জসিম উদ্দিন ফরায়েজী,সফরপুর ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নূরুল আবসার,মহদিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা নূরুন্নবী এবং পশ্চিম নাজিরপুর নতুন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা কবির আহম্মদ।১৯৯১ সালে মহদিয়া গ্রামের দুই তরুণের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আল আমিন ইসলামী পাঠাগার।পরে কাজের ব্যপ্তির বিবেচনায় এটি আল আমিন সোসাইটি নামে আত্মপ্রকাশ করে।সামাজিক কাজে অগ্রনী ভূমিকার জন্য আল আমিন সোসাইটিকে ২০০১ সালে সোনাগাজী উপজেলার শ্রেষ্ট সমাজসোবী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার।বর্তমানে আল আমিন সোসাইটির নিজস্ব ভবনে পাঠাগার,একটি নূরানি মাদ্রাসা পরিচালনার পাশাপাশি তরুণদের নিয়ে আল আমিন ইয়ুথ সোসাইটি নামের একটি সহযোগী সংগঠন পরিচালনা করছে। সংস্থাটি বিরতিহীনভাবে গত ৩৩ বছর ধরে এলাকায় তাফসিরুল কোরআন মাহফিল আয়োজন করে আসছে।