এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে না ফেরার দেশে শিক্ষক পিতা

আসাদুল্লাহ হাসান মুসা,পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ- পটুয়াখালীর বাউফলে বৃহস্পতিবার সকালে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। এসএসসি পরীক্ষার্থী তাসফিয়াকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে শেষবারের মতো বিদায় নেন তার বাবা মাহবুবুর রহমান। মেয়ের ভবিষ্যতের চিন্তায় তিনি নিজের মৃত্যুকেও উপেক্ষা করে যান।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল ৮টা ৩০ মিনিট। তাসফিয়া যখন এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখনই তার বাবা, কালিশুরী এস.এ ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান, হঠাৎ বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন এবং মাটিতে পড়ে যান। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
এই যাত্রাপথেই ঘটে এক মানবিক ঘটনা—সেই মুহূর্তে বাবার ইচ্ছাতেই তাসফিয়াকে নামিয়ে দেওয়া হয় পরীক্ষা কেন্দ্রে। তাসফিয়ার বাবার অনুরোধ ছিল—‘তুমি পরীক্ষা দাও, আমি ঠিক হয়ে যাব’। মেয়েও বাবার কথা বিশ্বাস করে কান্না চেপে প্রবেশ করে হলে। কিন্তু বিধি বোধহয় অন্য কিছু লিখে রেখেছিল। হাসপাতাল পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরই কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহবুবুর রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত মাহবুবুর রহমান শুধু একজন শিক্ষক নন, ছিলেন একজন আদর্শ মানুষ ও স্নেহশীল পিতা। তার প্রয়াণে কালিশুরী এস.এ ইনস্টিটিউটসহ গোটা বাউফল উপজেলা শোকাহত। সহকর্মী, ছাত্রছাত্রী, এলাকাবাসী সকলেই গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
বাউফল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু ইউসুফ বলেন, “স্যার সবসময় ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতেন। আজ নিজের মেয়েকে পরীক্ষায় পাঠিয়ে, নিজেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন, এটা ভেবে মন ভেঙে যাচ্ছে।”
তাসফিয়ার পরীক্ষার বছরেই মাহবুবুর রহমান কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব নেননি, শুধুমাত্র মেয়েকে সময় দেওয়ার জন্য। এই মমতাময়ী পিতার বিদায় যেন এক নিঃশব্দ বিসর্জনের প্রতীক হয়ে থাকল, যা শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, পুরো শিক্ষাঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।