চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে হাটহাজারীতে স্মারকলিপি প্রদান সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের

হাটহাজারী প্রতিনিধি:
উত্তর চট্টগ্রামে চায়না- বাংলাদেশ জেনারেল হাসপাতাল নির্মিত হলে সেবা পাবে দুই পার্বত্য জেলাসহ কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধ কোটি মানুষ। ২৩ এপ্রিল (বুধবার) হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের কুমারিকুল এলাকায় দুটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে সাজ্জাদ নামে এক তরুণের মৃত্যু। মুমূর্ষু অবস্থায় একজনসহ আরো চারজনকে নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। তবে এতে বেগ পেতে হয় আহত অটোরিকশা চালকের চিকিৎসার খরচ মেটাতে। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির কারণে প্রতিদিনের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয় পরিবারটির। যদি হাটহাজারীতে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল থাকত অন্তত ২৩ এপ্রিলের ঘটনার মত অনেক আহত রোগী সঠিক সময় হাসপাতালে ভর্তি হলে অন্তত প্রাণে বেঁচে যেত। হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, দুই পার্বত্য জেলা থেকে কিছু মুমূর্ষু রোগী মৃত্যুবরণ করে সঠিক সময় যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে। দুর-দুরান্ত থেকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে চমেক হাসপাতালে পৌঁছাতে লাগে দীর্ঘ সময়। এর মধ্যে কয়েকটি স্থান তো আছেই যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট লেগেই থাকে। উত্তর চট্টগ্রামের মধ্যে হাটহাজারী উপজেলা এমন একটি উপজেলা যেখানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাত হাটহাজারী মাদ্রাসা, কৃষি ইন্সটিটিউট, কৃষি গবেষণাগার, আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার কাম বুল স্টেশন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী, সরকারি দুগ্ধ ও গবাদিজাত উন্নয়ন খামার, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি বিশটিরও অধিক ব্যাংক, বড় বড় বিপনী বিতান, একটি মডেল থানাসহ আরো বিভিন্ন দপ্তর। যেখানে হাটহাজারী নয় কেবল রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, দুই পার্বত্যজেলা ছাড়াও বসবাস করে সারা দেশের লোক। পার্শবর্তী উপজেলাসমুহ এবং দুই পার্বত্য জেলার নাভি খ্যাত এ হাটহাজারী। উত্তর চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়েও হাটহাজারী উন্নত। সীতাকুণ্ড, মিরশরাই ছাড়াও রাজধানী ঢাকা থেকে হাটহাজারী আসার জন্য রয়েছে ভাটিয়ারী, ফটিকছড়ি ভূজপুর সংযোগ সড়ক। এ অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো তরান্তিত করতে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রস্তবনাও রয়েছে। যা খুব শিগগির বাস্তবায়নের আশা রয়েছে। হাটহাজারীতে রয়েছে প্রচুর সরকারি খাস খতিয়ানের জায়গা। কর্তৃপক্ষ চাইলে সরকারি কিংবা বেসরকারি যে কোন দপ্তর করতে পারবে। ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত ৫০০ শয্যার চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণে সম্ভাব্য হাটহাজারী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের ফটিকা বিল ও ১ নং ওয়ার্ডের দেওয়াননগর মিঠাছড়া এলাকা পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। এসময় হাটহাজারীতে হাসপাতালটি নির্মিত হলে কেবল হাটহাজারী নয় দুই পার্বত্য জেলা তথা খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, মিরশরাই উপজেলার মানুষ স্বাস্থ্য সেবায় উপকৃত হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে হাটহাজারী, দুই পার্বত্যজেলা ও পাঁচ ইউনিয়নের মানুষ এক যোগে সাধুবাদ ও দাবি তুলেন অত্র অঞ্চলে হাসপাতালটি নির্মাণের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে থাকেন হাসপাতালটি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি, গণসাক্ষর, মানববন্ধনের কথা ও তুলছেন তারা। এ দাবিতে সোমবার হাটহাজারীতে কর্মরত সাংবাদিকদের একটি সংগঠন হাটহাজারী সাংবাদিক ঐক্য পরিষদ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এসময় সংগঠনের সভাপতি মো. আসলাম পারভেজ বলেন, যতদুর শুনেছি হাসপাতালটি করতে জায়গা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সামাজিক অবস্থাসহ যা যা দরকার তার সব কিছুই আছে। তাই হাটহাজারীর মত অন্য কোথাও এমন সুযোগ সুবিধা আছে বলে মনে হয়না।
সাধারণ সম্পাদক মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, সার্বিক দিক দিয়ে হাটহাজারী অতুলনীয়। হাসপাতালটি এখানে নির্মিত হলে অন্তত চমেক যাওয়ার মাঝ পথে রোগী মারা যাবেনা। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় খুব দ্রুত একজন রোগী এখানে পৌঁছাতে পারবে। দুই পার্বত্য জেলাসহ ছয় উপজেলার অন্তত ৫০ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পাবে। আমরা আশা করছি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, এটা যৌক্তিক দাবি। হাটহাজারীতে হাসপাতালটি নির্মিত হলে দুই পার্বত্য জেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ উপকৃত হবে। একদিকে অসুস্থ মানুষ দ্রুত সেবা পাবে অপরদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপর চাপ কমবে। স্বারকলিপি দ্রুত প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে।
এসময় সংগঠনের সহ সভাপতি জাহেদ মঞ্জু, নির্বাহী সদস্য শ্যামল নাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল নাথ, অর্থ সম্পাদক আবুল মনছুর, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবু নোমান, দপ্তর সম্পাদক এইচ এম এরশাদ, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক রিমন মুহুরী, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাইফ, প্রবাসী সদস্য মো. জামসেদ, সহযোগী সদস্য মো. মুরসালিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও স্মারকলিপি প্রদান কালে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদ, উপজেলা ফুটবল লীগের এডহক কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।