ইবিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিককে বাধা, সাংবাদিক সংগঠন ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি

মিজানুর রহমান, ইবি প্রতিনিধিঃ
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দৈনিক বাংলা’র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির দপ্তর সম্পাদক সাকিব আসলামকে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একাধিক ইবি শাখা সহ-সমন্বয়ক ও ছাত্রদল কর্মীর বিরুদ্ধে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের কার্যালয় ভাঙ্গার পর জুলাই আন্দোনকারীদের ‘দুর্বৃত্ত’ আখ্যা দেওয়া, ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ও হলে অবৈধভাবে অবস্থান করায় বুধবার (৩০ এপ্রিল) শিক্ষার্থীদের সাথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ক্যাম্পাস সাংবাদিক ওয়াসিফ আল আবরারের আজিজুর রহমান হলে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটলে তিনি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তাকে ইবি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এসময় সংবাদ সংগ্রহের কাজে মেডিকেলে যান সাংবাদিক সাকিব আসলাম। মেডিকেলে ঢুকতে চাইলে ইবি ছাত্রদল কর্মী (ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজের অনুসারী) তৌহিদুল ইসলাম তাকে বাঁধা দিয়ে বলেন, ‘তোর নেতৃত্বে এই মারামারি হয়েছে। তোর নেতৃত্বে হত্যার উদ্দেশ্যে হমলা করা হয়েছে। আমি তোদেরকে মিটিং করতে দেখেছি। তুই ছাত্রলীগের দোসর।
এসময় তার সাথে ইবি শাখা সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, ইসমাইল হোসেন রাহাত, সায়েম আহমেদ ও শিক্ষার্থী নূর আলম সহ আরও অনেকে আক্রমনাত্মক আচরণ করেন ।
রিপোর্টার্স ইউনিটির দপ্তর সম্পাদক সাকিব আসলাম বলেন, ঘটনার পর আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য মেডিকেলে গিয়েছিলাম ডাক্তারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য। এসময় তারা আমার দিকে তেড়ে এসে নানা ভাবে আমাকে হুমকি দেয় ও গায়ে হাত তোলে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আমাকে হেনস্তা করে ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরবর্তীতে তারা আমাকে মেডিকেল অফিসার এর বক্তব্যও নিতে দেয়নি। একই সাথে আমরা ‘কিভাবে চলবো তা দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এ বিষয়ে প্রক্টর স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদল কর্মী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “ওই সময় আমরা তথ্য পাই সাকিব আসলামের রুমে ঘটনাটা ঘটছে। এ কারণে অনেকেই তাকে ঘটনায় জড়িত বলে মনে করছে। এদিকে যেহেতু আমরা জানতে পারি যে ওর রুমে ঘটনাটা ঘটছে তখন অনেকেই ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে নাই, আমিও নিতে পারিনাই। পরে ওকে বলা হইছে তুমি এখন ঢুইকো না। এখানে আমার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না যে ওকে তথ্য নিতে বাধা দেয়া।”
এসময় তাকে জানানো হয় যে সাকিব আসলামের রুমে ঘটনা ঘটেনি বরং তার পাশের রুমে ঘটেছে। তখন তিনি বলেন, “তাহলে এ বিষয়ে আমি জানিনা।”
এবিষয়ে ইবি ছাত্রদলরে যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমি মেডিকেলে প্রবেশ করেছি সাকিবের সাথে ওই ব্যাপারটা ঘটে যাওয়ার অনেক পরে। তাই ওকে বাধা দেয়ার ব্যাপারে আমি জানিনা।
এদিকে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিক সংগঠন ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) রিপোর্টার্স ইউনিটি’কে “আর থাকবে না” বলে হুঙ্কার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ‘দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ’ ক্যাম্পাস প্রতিনিধি রানা আহমেদ অভির বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়ার জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার কল করার পরেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে খুদে বার্তা দেওয়ার পরেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে, মেডিকেলে সংবাদ সংগ্রহকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখা সহ সমন্বয়ক নাহিদ হাসান আক্রমণাত্মক হয়ে বলেন “রিপোর্টার্স ইউনিটি কিভাবে থাকে দেখে নেব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজামান বলেন, “ ঘটনার সার্বিক বিষয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মিলে ২ টা তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ওখানে সবকিছু পূঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আলোচনা হবে এবং সমাধান করা হবে।”