আ.লীগের ক্ষমা নেই; ধর্মব্যবসায়ীদের ভোট ৩০ হাজারেই শেষ- বিএনপি নেতা ফয়সল আলীম

জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
আওয়ামী লীগ কখনও ক্ষমা পেতে পারে না।
বিগত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের মাটি থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিতাড়িত হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে। তিনি একা যাননি, বোনকেও নিয়ে গেছেন। তার পালানো দেখে রাতের ভোটের এমপি ৩৫০ জন পালিয়ে গেছে, ৫০০ উপজেলা চেয়ারম্যান পালিয়ে গেছে এবং ১১০০ ভাইস চেয়ারম্যান পালিয়ে গেছে। সেই সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও হাওয়া হয়ে গেছে— কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ এই হাসিনা সরকার বাংলাদেশকে ধ্বংস করেছে, বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে। গণতন্ত্রের ব্যবস্থাকে যেটা দেশের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য ছিল, সেটাকে বাংলাদেশের মাটি থেকে ধ্বংস করেছিল। কেউ কেউ বলছেন, তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দিয়েছে। যে রাজনৈতিক দল ধর্মের নামে ব্যবসা করে, কথায় কথায় বেহেশতের টিকিট বিক্রি করে সেই ধর্মব্যবসায়ীদের ভোট জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি মিলিয়ে ৩০ হাজারেই শেষ।
বুধবার সন্ধায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফার আলোকে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের শালাইপুর বাজারে জনসংযোগ শেষে এক পথসভায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জয়পুরহাট-১ আসনের এমপি পদপ্রার্থী ফয়সল আলীম তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, হত্যা ও গুমের মাধ্যমে বিরোধীদল এবং বাংলাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। তারা কাউকেই রেহাই দেয়নি। শত শত বিএনপি ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীকে গুম ও হত্যা করেছিল। আল্লাহ তাআলা অত্যাচার দেখে আর বরদাশত করেননি। ইতিহাসে এমনভাবে পালিয়ে যাওয়ার নজির আর কোনো দেশে নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ৫ আগস্টের পর নানা কথা বলা শুরু করেছে। তারা ভুলে গেছে অতীতের অত্যাচার-অবিচারের কাহিনী। এমনকি কেউ কেউ বলছে, তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। যে রাজনৈতিক দল ধর্মের নামে ব্যবসা করে, কথায় কথায় বেহেশতের টিকিট বিক্রি করে, সেই দলের সভাপতি বা আমির বলছেন আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করা হয়েছে। বাহ, কী সুন্দর কথা! পাঁচবিবির মানুষ আপনারা ভুলে যাবেন না, এই সেই আওয়ামী লীগ, যারা আমার মরহুম পিতাকে জেলখানায় হত্যা করেছিল। ভুলবেন না, কোরআনের পাখি খ্যাত মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকেও জেলখানায় হত্যা করা হয়েছিল। ভুলবেন না, এই শালাইপুরেই নিরীহ পাঁচজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। এই আওয়ামী লীগ কখনও ক্ষমা পেতে পারে না। যারা ধর্মের ব্যবসা করে, তারা আসলে ফ্যাসিস্টের সহযোগী।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভোটের জন্য মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করেছে। কথায় কথায় বলেছে, অমুক মার্কায় ভোট দিলে বেহেশতের টিকিট আছে। এটা কি কথা ভাই? কোন কিতাবে লেখা আছে? কোন মার্কার সাথে বেহেশতের সম্পর্ক আছে? আল্লাহর হুকুম পালন করলেই বেহেশতে যাওয়া যাবে। ধর্মের ব্যবসা করে যতই প্রচার চালান না কেন, কুসুম্বায় আপনাদের ভোট হবে না। সর্বোচ্চ ১০–১৫ শতাংশ ভোট পেতে পারেন। পাঁচবিবির মানুষ ধর্মব্যবসায়ীদের চিনে গেছে।
জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি মিলিয়ে ৩০ হাজারের বেশি ভোট পাবেন না। আসুন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষে ভোট দিন। জনগণ ধর্মব্যবসায়ীদের ভোট দেবে না। জনগণ উন্নতি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা দেখতে চায়। এজন্য ওনারা নতুন খেলা শুরু করেছে পিআর পদ্ধতির। ভোট পাবে মাত্র ১৫%, অথচ ৩০০ আসনে এমপি হলে দাঁড়াবে ৪৫ জন! এই জন্যই পিআর পদ্ধতির চিন্তা করছে। কিন্তু পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য কোনো পদ্ধতি নয়, এটা নির্বাচনকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র।
বাংলাদেশের মানুষ গত ১৬ বছর ভোট দিতে পারেনি। ভোটের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এই রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। মরহুম আব্দুল আলীম সাহেবের মতো আমাকেও আপনাদের সাথে পাবেন ইনশাআল্লাহ। জনগণের নেতৃত্বে দেখাবো, এমপি হয়ে আর্থিক সুবিধা নিতে হবে না, চাঁদাবাজি করে কোনো সুবিধা নিতে হবে না। সরকারের সব সুবিধা জনগণের মাঝে সঠিকভাবে বণ্টন করবো।
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, মরহুম আব্দুল আলীম সাহেবকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তার প্রতিশোধ নেবো জয়পুরহাট ও পাঁচবিবিকে নতুনভাবে গড়ে তোলার মাধ্যমে। ইনশাআল্লাহ নতুন পাঁচবিবি দেখবেন, নতুন কুসুম্বা ইউনিয়ন দেখবেন, যেখানে দুর্নীতিমুক্তভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।
এসময় আরও বক্তব্য দেন পাঁচবিবি থানা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও বালিঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন, পাঁচবিবি থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ বুলু, পাঁচবিবি থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদ সজল, সাবেক সভাপতি শামসুল হক দুলাল, জয়পুরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ জুয়েল, জেলা শ্রমিক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমজাদ হোসেন, তথ্য শিক্ষা গবেষণা সম্পাদক মুকুল হোসেন এবং জয়পুরহাট থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসান উদ্দিন তুষারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।