ফ্যাসিস্ট সহযোগীদের দখলে হাইওয়ে পুলিশ, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে দেশের মহাসড়ক, বদলির পরও বহাল তবিয়তে বিতর্কিত কর্মকর্তারা

স্টাফ রিপোর্টার:
দেশের মহাসড়কগুলো আজ চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে। পুলিশ বাহিনীর একাংশে এখনো সক্রিয় রয়ে গেছে সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী ও বিতর্কিত কর্মকর্তারা। বদলি ও পদোন্নতির পরও তারা বহাল তবিয়তে দখল ধরে রেখেছেন হাইওয়ে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ রিজিয়নগুলোতে। এর ফলে সাধারণ জনগণসহ দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
নির্বাচন ঘিরে এক সময় যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতিয়ার হয়ে দমন-পীড়নে জড়িত ছিলেন, তাদের অনেকেই এখনো প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।
বিশেষ করে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর, কুমিল্লা, খুলনা, বগুড়া ও মাদারীপুর রিজিয়নে এই প্রভাব সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান।
সূত্রমতে, এসব কর্মকর্তা বিভিন্ন মহলে লেনদেনের মাধ্যমে নিজেদের পদায়ন ও প্রভাব টিকিয়ে রেখেছেন, যার কারণে প্রকৃত যোগ্য কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
২০০৫ সালের ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তা এখন আলোচনায় ড. আ ক ম আখতারুজ্জামান বসুনিয়া শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তা ২০০৫ সালে এএসপি হিসেবে যোগ দেন। ২০১৮ সালের “নিশি ভোট”-এর পর দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ২০২২ সালে হাইওয়ে গাজীপুর রিজিয়নের দায়িত্ব নেন।
বদলি ও বিদায় সংবর্ধনা শেষে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরেও তিনি গাজীপুরেই বহাল রয়েছেন—অজ্ঞাত কারণে।
মোহাম্মদ শাহিনুর আলম খান ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের সময় আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পুরস্কার পান পদোন্নতিতে। সরকার পতনের পরও ২০২৫ সালের আগস্টে হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের দায়িত্ব নিতে সক্ষম হন, যা পুলিশ বাহিনীর ভেতরেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
মোহাম্মদ জাকারিয়া সাবেক মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার হিসেবে দমননীতির জন্য পরিচিত জাকারিয়া বর্তমানে খুলনা হাইওয়ে রিজিয়নে কর্মরত। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এখনো পলাতক আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং সংবেদনশীল তথ্য পাচার করছেন।
শহিদ উল্লাহ ২০১৮ সালে এসপি পদে পদোন্নতি পাওয়া এই কর্মকর্তা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে বদলি হলেও এখনো হাইওয়ে বগুড়া রিজিয়নে অবস্থান করছেন।
রহমত উল্লাহ ইয়াবা চোরাচালানে সম্পৃক্ততার অভিযোগে একাধিকবার বদলি হওয়া এই কর্মকর্তা বর্তমানে মাদারীপুর রিজিয়নে কর্মরত। সম্প্রতি আবার গাজীপুরে ফিরে যাওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
দেশের মহাসড়কগুলো যেখানে প্রতিদিন লাখো যানবাহন চলাচল করে, সেখানে ফ্যাসিস্ট সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের দখল থাকা জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বঞ্চিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদোন্নতি পাওয়া সত্ত্বেও অনেক যোগ্য কর্মকর্তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভালো পদে দেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে যারা পূর্বে সরকার-ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তারা টাকাপয়সা দিয়ে পছন্দের পদ বাগিয়ে নিচ্ছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আমাদের ফাইল টেবিল থেকে টেবিলে ঘুরছে, অথচ ফ্যাসিস্ট আমলের সুবিধাভোগীরা এখনো হাইওয়ে পুলিশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অ্যাডিশনাল আইজি মো. দেলোয়ার হোসেন এবং পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অ্যাডমিন) কাজী ফজলুল করিম-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থার প্রাণ হিসেবে পরিচিত মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে ফ্যাসিস্ট সুবিধাভোগী ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অপসারণ এখন সময়ের দাবি। অন্যথায়, জননিরাপত্তা ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা দুই-ই হুমকির মুখে পড়তে পারে।