একদিনের ব্যবধানে আমার দেশ’র তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আবারও মামলা করলেন মামলাবাজ রশিদ
গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ১৯তম মামলা
চট্টগ্রাম ব্যুরো:
মাত্র একদিনের ব্যবধানে আবারও আমার দেশ পত্রিকার তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত কর্ণফুলি শীপ বিল্ডার্সের এমডি স্বৈরাচারের দোসর আবদুর রশিদ। এ নিয়ে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে তার মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯টিতে।
গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে একশো কোটি টাকার মানহানী হয়েছে দাবি করে মামলাটি করেন তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। আদালতের বিচারক মামলাটি গ্রহণ করে আগামী ২ জানুয়ারি সমন জারি করেছেন।
এই মামলায় আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচিসহ তিন সাংবাদিককে বিবাদি করা হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার তার পক্ষে একই ব্যক্তি নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ষষ্ঠ আদালতে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয়েছে আমার দেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এম কে মনির ও চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সোহাগ কুমার বিশ্বাসকে।
জানা যায়, ২০০৮ সালে প্রথম ‘’দেবত্তোর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ১০ কোটি টাকা ঋণ’’ প্রতিবেদনের জন্য দৈনিক আজাদীর বিরুদ্ধে মামলা করেন আবদুর রশিদ। এরপর ২০১১ সালে দৈনিক নয়াদিগন্তের সম্পাদকের বিরুদ্ধে, ২০১৬ সালে মাছরাঙা টেলিভিশনের বিরুদ্ধে দুটি, ২০১৭ সালে দৈনিক যুগান্তরের বিরুদ্ধে পরপর তিনটি, ২০১৯ সালে দৈনিক যায়যায়দিনের বিরুদ্ধে একটি, দৈনিক আজাদীর বিরুদ্ধে একই বছর দুটি, ২০২০ সালে সকালের সময় ও মুক্তখবরের বিরুদ্ধে একটি করে, ২০২১ সালে মুক্তখবরের বিরুদ্ধে একটি, ২০২৩ সালে যুগান্তরের বিরুদ্ধে একটি ও ২০২৩ সালে দৈনিক প্রথম আলোর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। এসব মামলার সবকটি তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলি শীপ বিল্ডিং, কর্ণফুলি ডকইয়ার্ড, মেরিন ওয়ার্কশপ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অনিময়, জালিয়াতি ও দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশে ক্ষুব্ধ হয়ে করা।
আবদুর রশিদ কুমিল্লার পিপুলিয়া বাজার কোদালিয়া গ্রামের মরহুম মনছুর আহমদের ছেলে। তার বয়স প্রায় ৭০ বছর।
অভিযোগ আছে, তিনি ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হয়ে তিনি মাফিয়া হয়ে ওঠার পাশপাশি একজন মামলাবাজে পরিণত হন। তার অনিয়ম প্রকাশ না করতে সাংবাদিকদের ভয় দেখাতেই একের পর এক মামলা করেন বলে জনশ্রুতি আছে।
উল্লেখ্য, তিনি এসব মামলার তালিকার পিডিএফ করে প্রস্তুত রাখেন। যখনি কেউ তার প্রতিষ্ঠান নিয়ে কোন সংবাদ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন তখনি তিনি ওই তালিকা দিয়ে সাংবাদিকদের ভয় দেখান।
গত শুক্রবার তিনি আমার দেশ’র তিন সাংবাদিককে আইনী নোটিশ পাঠিয়ে পরদিনই দুইজনকে আসামি করে ফৌজদারি মামলা ঠুকে দেন। তার একদিন পর আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি, ব্যুরো প্রধান সোহাগ কুমার বিশ্বাস ও স্টাফ রিপোর্টার এম কে মনিরের বিরুদ্ধে আরও একটি মানহানী মামলা করেন তিনি।
এদিকে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করায় চট্টগ্রাম নগর ও জেলাজুড়ে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে। সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, শিক্ষক, জুলাই যোদ্ধা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মামলাটিকে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের পরিকল্পিত চেষ্টা আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানান। তারা অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবিও তোলেন।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) পৃথক বিবৃতি দিয়েছে। প্রেস ক্লাবের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি ও সিএমইউজে’র পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনওয়াজ। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাংবাদিক নেতারাও নিন্দা জানিয়েছেন।





