সিরাজগঞ্জ বিএড কলেজে ‘অনৈতিক ফি’ আদায়ের অভিযোগ-শামসুল আলম ও অধ্যক্ষ সাহানা পারভীনের বিরুদ্ধে
ওয়াসিম সেখ,সিরাজগঞ্জ:
সিরাজগঞ্জে চলমান বিএড পরীক্ষা-২০২৪ এর কেন্দ্রকে ঘিরে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে সিরাজগঞ্জ বিএড কলেজ। কলেজটির অফিস সহকারী শামসুল আলম ও অধ্যক্ষ সাহানা পারভীনের বিরুদ্ধে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে হলে অনৈতিক সুবিধা প্রদানের কথা বলে’ ১৭০০ টাকা করে মোট ২ লাখ ৩১ হাজার ২০০শত টাকা বেআইনিভাবে উত্তোলনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানী গেলে শিক্ষার্থীরা অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেন। জানা যায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে কলেজটির মোট ১৩৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাদের সকলের কাছ থেকেই কোনো ভাউচার ছাড়াই নগদ ১৭০০ টাকা সংগ্রহ করা হয় সর্বমোট ২ (দুই) লাখ ৩১ (একত্রিশ) হাজার ২০০ (দুইশত) টাকা।
অফিস সহকারী শামসুল আলম প্রথমে দাবি করেন এটি নাকি “কেন্দ্র ফি”। কিন্তু অন্যান্য পরীক্ষার ফি যে বহু আগেই অনলাইনে পরিশোধ করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তাছাড়া কেন ভাউচার ছাড়া টাকা নেওয়া হচ্ছে এ বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ নির্বাক হয়ে পড়েন।
অধ্যক্ষ সাহানা পারভীন, প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে স্বীকার করেন হ্যাঁ, প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৭০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আর গ্রহণের কারণ হিসেবে তিনি জানান, এবার আমাদের কলেজ জাতীয়করণ হবে। হাইকোর্টে রিট করা আছে। তাই আমরা ভাউচার ছাড়া টাকা তুলছি। কারণ প্রতি রবিবার কোর্টে আমাদের টাকা দিতে হয়।
এ বক্তব্যে আরও প্রশ্ন তৈরি হয় কলেজ জাতীয়করণের সঙ্গে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কী সম্পর্ক? আর সরকারি নিয়ম লঙ্ঘন করে কীভাবে নগদ অর্থ উত্তোলন করা হয়? এসব প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব তিনি দিতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরীক্ষার্থী জানান, এটা খোলামেলাভাবে চাঁদাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। জাতীয়করণের কথা বলে টাকা তোলা কি আইনসঙ্গত? আমরা অবিলম্বে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তি চাই।
আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষার চাপের মধ্যে এমন অর্থনৈতিক হয়রানি মানসিকভাবে দুর্বিষহ করে তুলেছে। যারা আমাদের শিক্ষার পরিবেশ বানাতে কথা বলে, তারাই আবার এই অনিয়ম করছে এটা লজ্জাজনক।
এবিষয়ে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রোজিনা আক্তারকে অবহিত করার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও সিরাজগঞ্জ বিএড কলেজের সভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। তবে ঘটনার বিষয়টি শুনলাম। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষা ও আইসিটি বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিচ্ছি।
ঘটনার পর কলেজে আলোচনার ঝড় উঠেছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি শামসুল আলম ও অধ্যক্ষ সাহানা পারভীনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা হোক।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, এ ধরনের অনিয়ম যদি অস্বচ্ছভাবে ধামাচাপা দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অনৈতিক ফি আদায়কে উৎসাহিত করা হবে।





