লালদীঘি ময়দানে হিজরি নববর্ষ ১৪৪৭ বরণ অনুষ্ঠানে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত

তারুণ্যের অবক্ষয় ও বিপথগামিতা রুখতে
জাতীয় চেতনাধর্মী সাংস্কৃতিক জাগরণ চাই
ইসমাইল ইমন চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
অবক্ষয়গ্রস্ত যুব তরুণদেরকে মাদক নেশা ধূমপান ও মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি থেকে বিরত রেখে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে হিজরি নববর্ষ ১৪৪৭ বরণ অনুষ্ঠানে। ২৮ জুন শনিবার, বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি ময়দানে হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদ ১৬তম হিজরি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত, হামদ, নাতে রাসুল (দ.), গজল, কাউয়ালি, মরমী, মাইজভান্ডারী, দেশাত্মবোধকসহ উজ্জীবনধর্মী নানা গান ও সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে হিজরি নতুন বছরকে বরণ করে নেন বিভিন্ন ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠনের নাত খাঁ ও খুঁদে শিল্পীরা । অশ্রসিক্ত বিদায় জানানো হয় হিজরি বিদায়ী বছর ১৪৪৬ কে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান পীরে ত্বরিকত আল্লামা গোলামুর রহমান আশরফ শাহ। পরিষদের মহাসচিব মুহাম্মদ এনামুল হক ছিদ্দিকী ও অর্থ সচিব আজিম উদ্দিন আহমেদ জনির সঞ্চালানায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রধান অতিথি ডা. শাহাদাত বলেন, হিজরি সনের মাহাত্ম্য, আশুরার তাৎপর্য, কারবালা ময়দানে নবী পরিবার ও হযরত ইমাম হোসাইনের (রা.) শাহাদাতের মর্মন্তুদ ঘটনা সকল স্তরের পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন করা এবং তারুণ্য ও সম্ভাবনাময়ী যুব শক্তির অবক্ষয় ও বিপথগামিতা রুখতে জাতীয় চেতনাধর্মী নির্মল শুদ্ধতম সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে জনজীবন বৈষয়িক উন্নতি ও সমৃদ্ধি আনলেও বৈষম্য ও অবক্ষয় প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রতিকূল ব্যবহারের কারণে যুব সমাজের নৈতিক বোধ বিশ্বাস আজ ম্লান হওয়ার পথে। অথচ রাষ্ট্র, সরকার বা সমাজ এই বিপুল সম্ভাবনাময়ী যুব তরুণদের মাঝে স্বপ্ন ও আশা জাগাতে পারছে না। যুব সমাজের এই দিশাহীনতা খুবই পীড়াদায়ক ও দুঃখজনক। আরব আমিরাত, ইরাক, বাহরাইন, সিরিয়া, জর্ডানসহ অন্তত বিশটি মুসলিম দেশে ১ মহররম হিজরি নববর্ষের দিনে রাষ্ট্রীয় ছুটি আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের এদেশে দিনটিতে সরকারি ছুটি না থাকা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। তাই ১ মহররম হিজরি নববর্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা এবং দিনটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালনে বক্তারা সরকারের কাছে দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধান বক্তা ছিলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা শাহ নূর মুহাম্মদ আল কাদেরী। তিনি বলেন, একটি জাতিকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে আগে তার কৃষ্টি সংস্কৃতিকে তুলে ধরা দরকার। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় মানুষের মনোজগতে ও চিন্তাধারায় অনুকূল পরিবর্তন আনে। চট্টগ্রাম থেকেই হিজরি নববর্ষ বরণের সূচনার জন্য হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশে নানা উপলক্ষে বিভিন্ন দিবস রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা হয়। অথচ ১ মহররম হিজরি নববর্ষ পালনে রাষ্ট্র আজ উদাসীন। এই উদাসীনতা ও নীরবতা আর দেখতে চায় না এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা। অনুষ্ঠানে অতিথি ও আলোচক ছিলেন রাজনীতিবিদ ও সংগঠক এম সোলাইমান ফরিদ, মুহাম্মদ আব্দুর রহিম, হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এম নাছির উদ্দিন মাহমুদ, আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী, মাস্টার মুহাম্মদ আবুল হোসাইন, অধ্যাপক মীর আবদুর রহিম মুনিরী, মুহাম্মদ আলী হোসাইন, মাওলানা শেখ মুহাম্মদ আরিফুর রহমান, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবুল মনছুর দৌলতী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মুহাম্মদ আবু আজম, আ ব ম খোরশিদ আলম খান, অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন, অধ্যক্ষ মাওলানা ফেরদৌস আলম খান আল কাদেরী, মাওলানা মুহাম্মদ করিম উদ্দিন নূরী, মুহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল, মাওলানা ইয়াছিন হোসাইন হায়দারী, মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম বাবর, অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, ডিআইএম জাহাঙ্গির আলম, মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন, মুহাম্মদ অহিদুল আলম, মুহাম্মদ খোরশেদ আলম সুমন, আলহাজ্ব মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, মুহাম্মদ আবদুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ আলী আকবর, মুহাম্মদ আমান উল্লাহ আমান, মুহাম্মদ বেলাল হোসাইন, মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী, মুহাম্মদ আলমগীর ইসলাম বঈদী, হাফেজ মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, সুলতান মাহমুদ সুমন, মুহাম্মদ মাসুমুর রশিদ কাদেরী, মুহাম্মদ ওসমান গণি কাদেরী, মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন কাদেরী, মুহাম্মদ মহিউদ্দীন তানভীর, মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম কাদেরী, মুহাম্মদ এনামুল হক কাদেরী, মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম, মুহাম্মদ নুর রায়হান চৌধুরী, মুহাম্মদ বশির আহমেদ চৌধুরী, মুহাম্মদ মফিজুর রহমান, মুহাম্মদ রবিউল হোসেন সুমন, মুহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন, মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন, মুহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল, মুহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মুহাম্মদ আবরার উল্লাহ, আরিফুল ইসলাম রুবেল, মুহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক হোসাইন, এস এম মিজহা, সাকের উল্লাহ প্রমুখ।
মিলাদ কিয়াম শেষে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য- সংহতি এবং বিশ্বের মজলুম মানবতার পরিত্রাণ কামনা করে মুনাজাত করা হয়। হাজারো জনতা হিজরি বর্ষরণ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।