সালাহউদ্দিনের ‘চরের দল’ মন্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিবাদ

কেরানীগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ থেকে সালাউদ্দিন এর ইসলামী আন্দোলন নিয়ে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে প্রতিবাদ যানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা জেলা দক্ষিণের সেক্রেটারী হাফেজ মাওলানা জহিরুল ইসলাম।
তিনি আজ ফেসবুক লাইভে বলেন গতকাল ৫ জুলাই ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়ের সভাপতিত্বে আয়োজিত একটি সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব সালাউদ্দিন আহমেদ সাহেবের বক্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
সেই বক্তব্যে তিনি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আশাজাগানিয়া রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে চরের দল হিসাবে উল্লেখসহ বিগত ফ্যাসিষ্টদের আমলের নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহন নিয়ে বিদ্বেষমূলক অসত্য ও অসংলগ্ন বক্তব্য দিয়েছেন, শুধু তাই নয় তিনি তার বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর বঙ্গ শার্দূল মুফতী ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাইয়ের ব্যাপারে ব্যাঙাত্বক ভাষা ব্যাবহার করেছেন।
তার এহেন বক্তব্যে সারাদেশে তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠে।
এই ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা জেলা দক্ষিণের পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই
পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করতে গিয়ে জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজনৈতিক শিষ্টাচার চরমভাবে লংঘন করেছেন।
রাষ্ট্র পরিচালনায় দেশের সকল মানুষের মতের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হলে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কোন বিকল্প নাই। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগামী জাতীয় নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে করার দাবী করেছে।
আমরা মনে করি এই দাবী নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ মতামত থাকাই রাজনৈতিক সৌন্দর্য। আলোচনা, তর্ক ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে দেশের স্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এটাই নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা।
কিন্তু গতকাল আমাদের কেরানীগঞ্জে বিএনপির জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ যে ভাষায় পিআর পদ্ধতির দাবীকে সামনে নিয়ে আসা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছেন তা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।
তিনি যে যুক্তিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সমালোচনা করেছেন তা স্ববিরোধী।
কারন বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে বিএনপিও ২০২১ এর আগের সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
২০১৩-১৪ সালে তারা গাজীপুর, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট ইত্যাদি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ীও হয়েছে।
২০১৯ সালেও তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, এবং উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদেও বিএনপির অনেকেই বিজয়ী হয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে।
চট্রগ্রামে জনাব শাহাদাত হোসেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী আমলের নির্বাচনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জনাব ইশরাক আওয়ামী আমলের নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং তারই ভিত্তিতে মেয়রের পদ দাবী করে আন্দোলন করেছেন।
জাতীয় নির্বাচনে বিষয় ২০১৪ তে নির্বাচনে বিএনপি যায়নি। ইসলামী আন্দোলন ও যায় নি।
২০১৮ তে নির্বাচনে বিএনপি গেছে ইসলামী আন্দোলন ও গেছে।
এমনকি ১৮ এর নির্বাচনে অংশ নেওয়া সকল রাজনৈতিক দল ফলাফল প্রত্যাখান করলেও বিএনপি তাদের ৬জন সদস্য সংসদে শপথ নেন এমপি ফ্যাসিস্টদের সকল সুবিধার হালুয়া রুটি গ্রহন করেন।
২০২৪ শে বিএনপি যায়নি ইসলামী আন্দোলন ও যায় নি।
নিজেরা এতোকিছু করার পরেও শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদের মতো একজন সিনিয়র নেতা এমন স্ববিরোধী, মিথ্যা ও অবাস্তব বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক অসভ্যতা করবেন বলে জাতী আশা করে না।
তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নাকি জিবনে কখনো একটি আসনে বিজয়ী হয়নি,চেয়ারম্যান এমনকি মেম্বারও হতে পারেনি।
আমি জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ সাহেবসহ প্রতিপক্ষের সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে হাত পাখার প্রতিকে নির্বাচিত হয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির এবং লক্ষীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহ বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে রাষ্ট্রীয় সিকৃতি পেয়েছেন।
এছাড়াও বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, কুড়িগ্রাম ও নরসিংদী সহ দেশের বিভিন্ন জেলার অসংখ্য ইউনিয়নে হাত পাখার প্রতিকে নির্বাচিত হয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন,
রয়েছে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার,
এবং সারাদেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রয়েছে অগনিত মেম্বার।
এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যও ছিলেন আমাদের।
জনাব ইলিয়াস আলীর মতো বিএনপি নেতারা গুম হয়ে শাহাদাৎ বরণ করলেও জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ ‘গুম’ হয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে ভারতে আরাম-আয়েশ অবস্থান করার কারণে অনেক কিছুই হয়তো তিনি জানেন না বা জানলেই অন্যকারো উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে মিথ্যা ও স্ববিরোধিতার আশ্রয় নিচ্ছেন। , জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন না। ফলে তার ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তির মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে কেউ যেনো তাকে ব্যবহার করতে না পারে।
তিনি তার বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে চরের দল হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
আমরা বলতে চাই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যদি চরের দল হয়ে থাকে তাহলে বিএনপি কিসের দল?
যেই দল ক্ষমতায় গিয়ে দূর্নীতি ও চুরি করে বাংলাদেশকে দূর্নীতিতে ৫ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে
সেই বিএনপি তো তাহলে চুরের দল!
গুম থাকা অবস্থায় র” এর আশ্রয়ে ভারতে রাজকীয় জীবন-যাপন করা এই ভারতের প্রডাক্ট চুরের দল বিএনপির মুখপাত্র জনাব সালাউদ্দিন আহমেদের মুখে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য সত্যিই বেমানান।
জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাতেও একই রকম বক্তব্য রাখলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের প্রতিবাদের মুখে তার বক্তব্য ইউথ ড্র করেছিলেন এবং সরি বলেছিলেন। তারপরেও একই ধরণের বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি সন্দেহজনক। তিনি কি নতুন বাংলাদেশের সুস্থ্য রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে কারো স্বার্থে বিনষ্ট করতে চাইছেন?