সিরাজগঞ্জে যাত্রা উন্নয়ন পরিষদের আড়ালে অশ্লীলতার বিস্তার, জড়িত মিজান ও মঞ্জিল

ওয়াসিম সেখ, সিরাজগঞ্জ।
সিরাজগঞ্জে ‘যাত্রা উন্নয়ন পরিষদ’ নামে সাংস্কৃতিক সংগঠনের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক ও অশ্লীল কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। স্থানীয়ভাবে সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা মিজান ও মঞ্জিল নামের দু’জন ব্যক্তি এ কার্যক্রমে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সূত্র জানায়, যাত্রা বা পালা গানের নামে রাতের আঁধারে মঞ্চে চালানো হয় অশালীন নৃত্য, বর্ষা মৌসুমে নৌকাভ্রমণের নামে হয় অশ্লীলতা আর দ্ব্যর্থবোধক সংলাপের উপস্থাপন। এসব কার্যক্রমে অংশ নিতে বাইরের জেলা থেকে আনা হয় নর্তকীদের, যাদের পোশাক ও আচরণ সামাজিক শালীনতাকে চরমভাবে লঙ্ঘন করে। এর ফলে এলাকার যুবসমাজের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ছে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।
এক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যাত্রা তো এক সময় ছিল আমাদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের প্রতীক। কিন্তু এখন তা যেন বিকৃত রূপে হাজির হয়েছে। প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন, এই অপসংস্কৃতি দ্রুত বন্ধ করা হোক।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, মিজান নিজেকে যাত্রা উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় সরকারি অনুমতির অপব্যবহার করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে এসব অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এই আয়োজনে অর্থের লেনদেনও হয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে, যা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হয়। তার সঙ্গে জড়িত রয়েছে মুঞ্জিল, বড় পাংগাশীর রুহুল, সিএনজি চালক সুলতান, সিরাজগঞ্জ রোডের শাহিন ও বয়লির মধুসহ আরও কয়েকজন।
এ বিষয়ে যাত্রা উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজান বলেন, “আমাদের সংগঠনের কেউ অশ্লীল কাজে জড়িত না। যদি কেউ নৌকার ভিতরে এমন কিছু করে, সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ—আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
তবে পরিষদের সভাপতি মঞ্জিল স্বীকার করে বলেন, “নৌকার ভিতরে অনেক মেয়েই অশ্লীল নাচ করে। আমরা চাই এটি বন্ধ হোক।”
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রাকিবুল হাসান বলেন, “এ ধরনের কার্যক্রম এক সময় চলত। আমাদের অভিযানের ফলে এখন অনেকটা কমেছে। তবে কারও কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য থাকলে তা জানানোর অনুরোধ করছি—আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা মনে করেন, যাত্রা আমাদের লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম ধারক। এটি যদি অশ্লীলতার আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়, তবে সমাজ ও সংস্কৃতির ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই এই অপচেষ্টা রোধে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।