সারাদেশ

সারে সংকটে কৃষকদের দ্বিতীয়বারের মতো মহাসড়ক অবরোধ

আবুহাসান (আকাশ), লালমনিরহাটঃ

​বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও সার সংকটে কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে ফের সার সংকট দেখা দেওয়ায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় দ্বিতীয়বারের মতো সারের দাবিতে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা।

​আজ ৭ ডিসেম্বর (রবিবার) সকালে উপজেলার মেডিকেল মোড় এলাকার সার বিক্রয় কেন্দ্র ‘মেসার্স ওয়াছেক খান’-এর সামনে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন কৃষকরা। তবে, এর আগে উপজেলার অডিটোরিয়াম এলাকার মোরশেদ সার ঘরে সার না পেয়ে তাঁরা প্রথম মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন।

​কৃষকদের অভিযোগ, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিলারের গেটের বাইরে অপেক্ষা করেও তাঁরা সার পান না। অপরদিকে, ডিলারেরা সাধারণ কৃষকদের সার না দিয়ে প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা বেশি দামে দোকানের কাছে সার বিক্রি করছেন। এতে দোকানদারেরা তাঁদের প্রতি বস্তা সারে ৪০০/৫০০ টাকা লাভ ছাড়া কৃষকদের সার দিতে নারাজ হন।

​তাঁরা আরও জানান, লালমনিরহাটের ব্র্যান্ডিং পণ্য হলো ভুট্টা চাষ। সেই ভুট্টা চাষাবাদের মৌসুম শুরু হয়েছে। জেলার সব চেয়ে বেশি ভুট্টার চাষ হয় হাতীবান্ধা উপজেলায়। ভুট্টা চাষের শুরুতেই সার সংকটের খবরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। এই সার নিয়ে গত সপ্তাহে এই উপজেলার সিংগিমারী ইউনিয়নের কৃষকরা মহাসড়ক অবরোধ করে ডিলার ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিলেও কৃষকরা তাঁদের কাঙ্ক্ষিত সার না পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মহাসড়ক অবরোধ করেন।

​হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের বিসিআইসি’র পরিবেশক মেসার্স ওয়াছেক খান সার ঘর থেকে সার বিক্রি করা হয়। কয়েক দিন ধরে কৃষকেরা সেখান থেকে সার পাচ্ছিলেন না।

​বিক্রয়কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, রবিবার সকালে সিন্দুর্না ইউনিয়নের চাষিদের নিকট সার বিক্রি করা হবে। এই প্রচারণা শুনে উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের কৃষকেরা সকালে সেখানে ভিড় জমান। মুহূর্তেই সার ক্রেতার দীর্ঘ লাইন হয় ওই বিক্রয় পয়েন্টে। কিন্তু কয়েকজন কৃষককে তাঁদের চাহিদামতো সার না দিয়ে হঠাৎ বিক্রয়কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, “১৪ দোন জমির জন্য ইউরিয়া সার দরকার। কয়েক দিন ধরে ঘুরছি তারপরও সার পাইনি। আজ সকালে সার আসবে শুনে গিয়েছিলাম, কিন্তু সার না পেয়ে শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ডিলাররা বাইরে বেশি দামে সার বিক্রি করছে। সার না পেলে ভুট্টার আবাদ নষ্ট হবে।

​কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, সারের জন্য বারবার ডিলারের কাছে যাচ্ছি, তবু সার পাই না। খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছে ডিলাররা। এই দুর্নীতি আর চলতে পারে না। ডিলার আর কৃষি কর্মকর্তাদের অপসারণ চাই।
​কৃষক শামসুল আলম বলেন, ভুট্টা খেতে এখনই সার দেওয়ার সময়। আজ বা কালকের মধ্যে সার না পেলে রোপণ করাই সম্ভব হবে না। আমার মতো অনেক কৃষকই সার পাচ্ছে না। এবারের ভুট্টার আবাদ কী হবে আল্লাহই জানে।

​মেসার্স ওয়াছেক সার ঘরের স্বত্বাধিকারী মো. ওয়াছেক খান মুঠোফোনে বলেন, কৃষি অফিসের লোকজনের উপস্থিতি ছাড়া সার বিক্রি করা হয় না। ছেলেরা আমার ব্যবসা দেখাশোনা করেন। আমি তেমন কিছু জানি না।

​এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মোস্তফা কামাল, তানজিলা আক্তার ও গোবিন্দ কুমারের সহযোগিতায় পরিবেশক (ডিলার) সারগুলো খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সার বিক্রি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কৃষকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে পরিবেশক ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষুব্ধ কৃষকরা মহাসড়কে টায়ারে আগুন লাগিয়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করেন।

​খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা ও সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর ইসলাম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গিয়ে ৩ ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পর্যাপ্ত সার সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিলে মহাসড়ক ছেড়ে দেন কৃষকরা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

সারাদেশ

মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হলেন সাব্বির আহমেদ সামাদ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে প্রচার সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার একনিষ্ঠ ও ত্যাগী ছাত্রনেতা সাব্বির আহমেদ সামাদ।
সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,