জামালপুরের মেয়ে মোহনা জিতেছে “মিস পিস ইন্টারন্যাশনাল” অ্যাওয়ার্ড-২০২৫

ফারিয়াজ ফাহিম
ঢাকা ক্যানভাস
জামালপুরের মেয়ে নীলিমা হাসান মোহনা সাম্প্রতিক সময়ে অর্জন করেছে “মিস পিস ইন্টারন্যাশনাল” অ্যাওয়ার্ড-২০২৫।
নিলিমা হাসান মোহনা,বয়স ২২।জামালপুরের এই তরুণী এখন বাংলাদেশের প্রতিটি তরুণীর আইডল হয়েছে। এতো কম বয়সেই তিনি জিতে নিয়েছে “মিস পিস ইন্টারন্যাশনাল” -২০২৫ এর অ্যাওয়ার্ড।
“ঢাকা ক্যানভাসকে” মোহনা জানায়, আমি নিতান্তই একজন সাধারণ মেয়ে ছিলাম।স্বভাবতই আমি সবার মতো বেশি সুন্দর ও ছিলাম না।ছোটবেলায় আমাকে অনেকে বলত তোমার হাসি ভালো না, দাঁত ভালো না, কথা বলার ভঙ্গি বিরক্তিকর।
“তোমার দাঁত এর কেন ব্রেসেস করাও না” —এই ধরণের মন্তব্য প্রায়ই শুনতে হতো আমাকে। চারপাশের মানুষ অনেক সময় আমার আত্মবিশ্বাসে আঘাত করতো, বিশেষ করে যখন বলতো, “তুমি চুপ থাকলেই ভালো, তোমার কথা বলার ভঙ্গি ভালো না , তুমি হাসলে ভালো লাগে না।”
আমার শুরুটা হয়েছিল গাজীপুর শহরে। বাবা-মায়ের কর্মসূত্রে সেখানেই কেটেছে আমার শৈশব। মোটামুটি একজন মেধাবী শিক্ষার্থীই ছিলাম বলা চলে।স্কুলের শিক্ষকরাও আমাকে খুব ভালোবাসতেন। সবকিছুই ছিল যেন ঠিকঠাক, শুধু এক জায়গায় সমাজ বারবার প্রশ্ন তুলেছে—আমার শারীরিক গঠন নিয়ে!
কিন্তু আমি এসব শুনেও কখনো নিজেকে কোনো কিছু থেকে থামিয়ে রাখিনি। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য সেই কষ্টকে শক্তিতে রূপান্তর করেছি। ভাবতাম, “যারা বলে আমার কথা শুনতে ভালো লাগে না, তাদের প্রমাণ করে দেখাতে হবে—আমার কণ্ঠস্বরেই একদিন গর্ব করবে সবাই।”
ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। স্কুলে ডিবেট চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলাম। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করেছি- নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার ও সামাজিক সচেতনতামূলক কাজেও। ধীরে ধীরে নিজের আত্মবিশ্বাসকে গড়ে তুলেছি আমি।
সবশেষে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে বিজয়ী হওয়ার পর, সেই কণ্ঠস্বর থামানো যায়নি, থামানো সম্ভবও না। যাকে একসময় বলা হতো “তুমি কথা বলো না”, আজ তার কথা শোনে বিশ্ব।
মিস পিস ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন সম্পর্কে মোহনা জানায়,
মিস পিস ইন্টারন্যাশনাল ২০২৫ গত ৮ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত ফাইনাল রাউন্ডে আমি “Miss Peace International 2025” প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছি। একমাস ব্যাপী ছিল এই প্রতিযোগিতা । ক্যাম্বোডিয়ায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক এই কম্পিটিশন অনলাইনে হয় যেখানে মোট ৩৭টি দেশ অংশগ্রহণ করে। আমার ন্যাশনাল ডিরেক্টর ছিলেন প্রিয়তা ইফতেখার । বাংলাদেশ টুরিসম বিউটি অর্গানাইজেশন থেকে আমাকে নির্বাচিত করা হয় মিস পিস বাংলাদেশ 2025 হিসেবে। এবং আমি বিজয়ী হই এবং মিস পিস ইন্টারন্যাশনাল খেতাব অর্জন করি।
এই গৌরবজনক মুকুট অর্জনের পাশাপাশি আমি আরও দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি—
“Miss Photogenic 2025” টাইটেল হোল্ডার হিসেবে এবং “Best Talent Award” .
Miss Peace International” প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী শান্তি, পরিবেশ এর রক্ষণাবেক্ষণ, মানবিকতা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা , যা আমার এডভোকেসির সাথে সংযুক্ত। এই প্ল্যাটফর্ম আমাকে একটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে উপস্থাপনের সুযোগ দিয়েছে এবং আমি বিশ্বাস করি, এই অর্জন আমার আগামীর পথচলাকে আরও দৃঢ় ও অর্থবহ করবে।
পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নিলিমা হাসান মোহনা বলেন,
আমি পড়াশোনা করছি নর্দান উনিভার্সিটি বাংলাদেশ কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে ।
আমার গ্রামের বাড়ি জামালপুরে কিন্তু বাবা-মার কর্মসূত্রে গাজীপুরে বড় হওয়া । বর্তমানে পড়াশোনার জন্য ঢাকাতে অবস্থান করছি।
আমার স্বপ্ন সাকসেসফুল বিজনেস উইমেন হওয়া এবং নারীদের জন্য এমন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে নারীদের ট্রেনিং থেকে শুরু করে প্রোপার কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিবে আমার প্রতিষ্ঠান । পড়াশোনার পাশাপাশি আমি একজন একজন উদ্যোক্তা , ডিবেট চ্যাম্পিয়ন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার সাথে কাজ করছি । সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত স্বরূপ ভালো কাজ করতে চাই এবং মানুষের নেগেটিভ চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন ঘটাতে চাই আমার ভালো কাজের মাধ্যমে । আমি চাই আমাকে দেখে নারীরা তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাক এবং তারা যেমন তেমনভাবে নিজেকে ভালোবাসো বাহ্যিক রূপে নয় আভ্যন্তরীণ রূপে যেন প্রত্যেক মানুষ নিজেকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে পারে সেই লক্ষ্যেই আমি কাজ করতে চাই এবং এই পজেটিভনেস ছড়িয়ে দিতে চাই সকলের মাঝে।
হতাশার গল্প –
আমি একসময় খুব বেশি একটা কথা বলতাম না।সবসময় চুপচাপ থাকতাম।কিন্তু যখন ডিবেটে অংশ নেই ও চ্যাম্পিয়ন হই তখন থেকে নিজের প্রতি কনফিডেন্স বাড়ে।তবে এটাও সত্যি যে একসময় খুব কান্না করতাম।কাউকে বুঝতে দেয় নাই আমার ভিতরে কষ্ট কতটা জমে রয়েছে। হতাশ হয়েছি,ভেঙে পরেছি,কিন্তু পরবর্তীতে এগুলো থেকেই আমার ঘুরে দাড়ানোর তীব্র আকাঙ্খা তৈরি হয়।
আজ নিলিমা হাসান মোহনার কথাতেই মুগ্ধ পুরো বিশ্ব। মঞ্চ আলো করে আজ সে যখন বলে, সবাই চুপচাপ শুনে। কারণ সে এখন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী, বাংলাদেশের গর্ব, এবং অর্জন করেছে দুটি মর্যাদাপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড।
প্রসঙ্গত,মিস পিস ইন্টারন্যাশনাল (Miss Peace International) একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা, যা ২০০৬ সালে বুলেন্ট গুনকুট (Bulent Gunkut) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া এবং প্রতিযোগীদের “শান্তির দূত” হিসেবে গড়ে তোলা। প্রতিযোগিতাটি প্রথমবারের মতো তুর্কি প্রজাতন্ত্রের উত্তর সাইপ্রাসের গুজেলইউর্ট শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।।