তারাগঞ্জ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

জুয়েল ইসলাম
তারাগঞ্জ(রংপুর)প্রতিনিধি:
রংপুরের তারাগঞ্জে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ কেএম ইফতেখারুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, বেআইনি ভাবে সরকারি গাছ কাটা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন এলডিডিপি কতৃক তারাগঞ্জ উপজেলায় গঠিত ১৫ টি প্রডিউসার গ্রুপ (পিজি) এর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের নিয়মিত সভার কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৯৬ হাজার টাকা। গত জানুয়ারি মাসের দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয় জানুয়ারি ২৩ ও ফেব্রুয়ারি ০৪ তারিখে। সেই সাথে রেজিস্ট্রার অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের বরাদ্দ দুটি নিয়মিত সভা হয় ফেব্রুয়ারি ১৫ ও ২৪ তারিখে। চারটি সভা অনুষ্ঠিত হলেও পিজি সদস্যরা নাস্তা পেয়েছে দুটিতে। ফেব্রুয়ারি মাসের স্বাক্ষর পিজি রেজিস্ট্রার খাতায় নেয়া থাকলেও পিজির দায়িত্বে থাকা এলএসপিরা পিজি গ্রুপের সভাপতি-সম্পাদকসহ সদস্যদের একটি ইউএলও স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্বাক্ষর করার জন্য যোগাযোগ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে পিজি গ্রুপের সদস্যদের মাঝে।
এছাড়াও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের প্রধান ফটকের সামনে থাকা মেহগনি গাছ ও ভবনের পেছনে থাকা কাঁঠাল, জাম্বুরা ও আমগাছ সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে কাটা হয়েছে। অফিস চত্বরে আগের কর্তনকৃত সংরক্ষিত কাঠের গোলাই, অবৈধভাবে কাটা গাছ ও ডালপালাগুলো কোনো ধরনের নিলাম ছাড়াই বিক্রি করেছেন এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। যার আনুমানিক বাজার মূল্য লক্ষাধিক টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউনিয়ন ভেকসিনেটরের দায়িত্ব পালন অবস্থায় কৃত্রিম প্রজনন করায় সবুজ ইসলাম, মাহামুদুর রহমান মিলন ও এলএসপি মহসিন আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। তাদের দাবি সাড়া দেশে অনেক ভেকসিনেটর ও এলএসপি আছে যারা কৃত্রিম প্রজনন সেবার সাথে জড়িত। তাহলে শুধু কেনো আমাদের প্রতি তার শত্রুতা? তাহলে কি ভেকসিনের ৫০ শতাংশ টাকা না পাওয়ায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমাদের বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্র রচনা করেছেন?
জানতে চাইলে কুর্শা ইউনিয়নের ভেকসিনেটর সবুজ ইসলাম বলেন, এ বছরে একবার পিপিআর রোগের ভেকসিন প্রোগ্রাম হয়েছে। আমাদের ভেকসিন করার জন্য যে বরাদ্দ এসেছিলো তাও আবার সেখানে ইউএলও অর্ধেক ভাগ চায়। আর ভাগ না দেওয়ার ক্ষোভে কারন দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। চাকরি খাওয়ার নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন আমাদের। কিন্তু আলমপুর ইউনিয়নের ভেকসিনেটর মারা যাওয়ায় ভেকসিন প্রোগ্রামে সেখানে উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ অন্যায় ভাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। এবং একজন রাজস্ব কর্মকর্তা হয়েও যে ভেকসিনেটরের টাকা আত্মসাৎ করলো তার বিচার করবে কে? আমরা কি তাহলে বৈষম্যের শিকার হয়েই যাবো?
দক্ষিণ সয়ার ডেইরী পিজি গ্রুপের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, গত মাসের মিটিং শেষে আমাদের সদস্যদের মাঝে ২০ টাকা মূল্যের নাস্তার প্যাকেট দেন। আর এখন শুনছি আমাদের বরাদ্দ আরো বেশি। আমাদের এখানে যে আরো কত অনিয়ম হয়েছে তারাই ভালো জানে। বৃহস্পতিবার এলএসপি মহসিন আমার বাড়িতে এসে একটি কাগজে ফেব্রুয়ারি মাসের নিয়মিত সভা না করে আগাম স্বাক্ষর চাচ্ছেন। কিন্তু আমি এখনো স্বাক্ষর করিনি।
সয়ার ইউনিয়নের পিজি গ্রুপের দায়িত্বে থাকা এলএসপি মহসিন আলী বলেন, আমাদের অফিস থেকে চিঠি দিয়েছে স্বাক্ষর নেয়ার জন্য। তাই আমি পিজি গ্রুপের সভাপতির বাড়িতে যেয়ে স্বাক্ষর চাই। আমি তাকে অফিস আদেশ দেখাই। তারপরেও তিনি স্বাক্ষর করেনি।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ কেএম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, পিজি গ্রুপের সদস্যদের নাস্তার বরাদ্দের ১৫ শতাংশ টাকা কেটে বাকি টাকার নাস্তা দেওয়া হয়। এলএসপি ও ভেকসিনেটরদের সার্কুলার অনুযায়ী তারা সরকারি নিয়মে এক লোক দুই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবে না। সে কারনেই তাদের কারন দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে তাদের চাকরিচ্যুত করার উদ্দেশ্যে নয়। আর ভেকসিনের অর্ধেক টাকা চাওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। ডালপালা কেটেছি, কোনো কাঠজাতীয় গাছ কাটা হয়নি। ডালপালা কাটতে গিয়ে ভুলবশত ছোট কিছু গাছ কেটেছেন বলে স্বীকার করেছেন।