কালাইয়ে শেষ মুহূর্তে আলু তোলা দাম কম হওয়ার কৃষক অসন্তুষ্ট অন্যদিকে হিমাগারে আলু ঢুকাতে না পারায় পরেছেন বিপাকে

জাহিদুল ইসলাম জাহিদ স্টাফ রিপোর্টার।
শেষ মুহূর্তে চলছে আলু তোলার কাজ কাজ। এ বছর আলু রোপনের আগ মুহূর্তে বৃষ্টির কারণে দেরি হলেও চলতি মৌসুমে শ্রমিক সংকটের কারনে জমি থেকে আলু ওঠাতে আরো দেরি হয়েছে কৃষকদের । আবার অনেকে জমি থেকে আলু ওঠাতে পারলেও সংরক্ষণ করতে পারছে না হিমাগারে। যার কারনে অনেকে ৫-৬ দিন ধরে মাঠে বস্তা বোঝায় করে রেখেছেন। এ অবস্থায় সময় মত সব কাজ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।
জানাগেছে, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় আলু ওঠানোর শুরু থেকেই শ্রমিক সংকট পড়েছে আলু চাষীরা। চাহিদা বেশি থাকায় শ্রমিকদের দামও ছিলো অনেক বেশী। জমি থেকে আলু ওঠানোর কাজ করে মূলত অধিকাংশ মহিলা। শুরুতে দিনের মজুরি ৩০০ টাকা থাকলেও মাঝখান থেকে শেষ পর্যন্ত ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৪০০ হয়। তারপরও ছিলো শ্রমিক সংকট।এছাড়াও কৃষক আলুর ভালো দাম না পাওয়ায় নিজেই অটোভ্যান, ইজিবাইক, ভটভটি, ট্রাক্টর এবং ঘোড়াগাড়ি যোগে আলু সংরক্ষণের জন্য নিয়ে যাচ্ছে হিমাগারে। এতে আলু বহনের গাড়িঘোড়া বেশি হওয়াতে হিমাগার গুলোতে ব্যপক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানযট। ফলে কৃষক আলু ওঠানোর পর জমিতে ৫-৬ দিন ধরে বস্তা করে রাখলেও সংরক্ষণের জন্য নিতে পারছেনা হিমাগারে। যার ফলে বিপাকে পরেছেন তারা।
উপজেলার জমিনপুর গ্রামের আলুচাষী রাহেল আকন্দ বলেন, আলু বুকিং সংকট না থাকলেও জমি থেকে ষ্টিক আলু ওঠাতে পারলেও শ্রমিক সংকটে রুমানা পাকড়ি ওঠাতে পারিনি। এ দিকে ৬ দিন হলো ষ্টিক আলু ওঠানো হলেও হিমাগারে আলু রাখার জন্য গাড়ি পাচ্ছিনা। আমি ছাড়াও অনেক কৃষকের আলু বস্তা করা অবস্থায় মাঠে পরে আছে।
একই গ্রামের আ: ওহাব বলেন, হিমাগারে গেলে আনলোড করতে টাকা। আলুর বোঝাইকৃত গাড়ি সিরিয়ালের পিছনে থাকলেও ঘুষ দিলে আগে আনলোড। ফলে কৃষকদের পদে পদে হয়রানি আর ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। এদিকে ২-৩ দিনের ব্যবধানে ৬৫০ টাকার আলু এখন ৫৭০ টাকা মন বিক্রি করতে হচ্ছে। কৃষকদের দেখার কেউ নেই কি?
কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, গত বছর জমি থেকে আলু হিমাগারে নিয়ে গেছি প্রতি বস্তা ৫০ টাকা । এবছর একই হিমাগারে যেতে বস্তা প্রতি গাড়ি ভারা নিচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। হিসাব করে দেখাযায় এ বছর হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচা হচ্ছে ২৬ টাকার উপরে।
হিমাগারে আলু বহনকারী ট্রলি গাড়ি চালক নাসির, এমদাদুল, কাদের জানান, আমরা প্রতি বছর দিন-রাতে জমি থেকে হিমাগারে আলু নিয়েগেছি ৩-৪ বার করে। আর চলতি এ বছর ব্যপক যানযট সৃষ্টি হওয়ায় হিমাগারে ১ বার ঢুকলে আর বের হওয়ার সুযোগ থাকেনা। সেই ক্ষেত্রে আমাদের ৮০ টাকা ভাড়া পোষাইতেছেনা।
রাফি, রাহুল, সিয়ামসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, রাস্তায় যানযটের পেছনে হিমাগার কর্তৃপক্ষ অনেকটাই দায়ী। এই যানযটে পরে আমাদের এক থেকে দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। এতে আমরা শিক্ষার্থীসহ অনেকের সমস্যা হয়। যানযট নিরসনের জন্য রাস্তার উভয় পাশে হিমাগার কর্তৃপক্ষ লোক রাখলে যানজট সৃষ্টি হতো না। ফলে সহজেই জনসাধারণের দুর্ভোগ কমে যেত।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য মতে, উপজেলায় ১১টি হিমাগার রয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৭০০ হেক্টর থাকলেও তা ছাড়িয়ে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে ।এতে প্রায় তিন লাখ ১২ হাজার ২৭৫ টন আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে আলু চাষ হওয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষক নিজেই হিমাগারে আলু রাখায় হিমাগারে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ চাপে ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আলু ঢুকাতে না পারায় তারা আলু কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে দাম কমেছে। আশা রাখছি এ চাপ কমেগেলে আলুর দাম আবার বৃদ্ধি পাবে।