ইবির লালন শাহ হলে আন্তঃব্লক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত
ইবি প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) লালন শাহ হল শাখা ছাত্রশিবিরের আয়োজনে আন্তঃব্লক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হয়েছেন যথাক্রমে হলের দক্ষিণ ব্লক ২য় তলা ও উত্তর ব্লক ২য় তলার শিক্ষার্থীরা। তৃতীয় স্থান অধিকার করেন উত্তর ব্লক ৩য় তলার শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাত নয়টা নাগাদ এ টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এতে হল ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান। পাশাপাশি ইবি ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং লালন শাহ হলের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ টুর্নামেন্টের আটটি টিমের মধ্যে চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিজয়ী দলগুলোর মধ্যে সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ ও পরে ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
খেলার শুরুতে টসে জিতে ব্যাটিং এ নেমে দক্ষিণ ব্লক ২য় তলাকে ৮৭ রানের টার্গেট দেয় উত্তর ব্লক ২য় তলা। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেয় দক্ষিণ ব্লক ২য় তলা। ফাইনালে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন বিজয়ী দলের শাকিল।
ম্যাচ শেষে বিজয়ী, রানার্স আপ ও ৩য় স্থান অধিকারী দলকে যথাক্রমে ২ হাজার, দেড় হাজার ও ১ হাজার টাকার প্রাইস মানি এবং বিজয়ী ও রানার্সআপ দলকে ট্রফি ও দুইদলের প্রতিজন খেলোয়াড়কে মেডেল প্রদান করা হয়।
এসময় হল ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম বলেন, আমাদের টুর্নামেন্ট আয়োজনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আমরা একই হলে থাকার পরেও নিজেদের মধ্যে অনেকের পরিচিত নাই। তাই নিজেদের মধ্যেকার বন্ধন দৃঢ় করার জন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র আয়োজন। আমরা আশাকরি আমাদের এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমাদের এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। আমরা আগামীতেও এধরনের শিক্ষার্থীবান্ধব আয়োজন অব্যাহত রাখবো ইনশাআল্লাহ।
এসময় ইবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, আজকের যে প্রতিযোগিতা যেটা হলো এটা শুধুমাত্র ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়। এটা আমাদের শেখায় ভ্রাতৃত্ববোধ, সহমর্মিতা ও টিম ওয়ার্ক। খেলাধুলা যেভাবে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে ঠিক তেমনি আমাদের নৈতিক ও ধর্মীয় চর্চার মধ্য দিয়ে নিজেদের আধ্যাত্মিক উন্নয়ন করাটাও জরুরি। একটি সুস্থ শরীর মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণ উভয় কাজেই ব্যয়িত হতে পারে। কিন্তু সেই সুস্থ শরীরের সাথে যদি নৈতিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করা যায় তাহলে তা শুধুমাত্র কল্যাণেই ব্যয়িত হবে। তাই আমরা খেলাধুলার মধ্য দিয়ে যেমন শরীরকে সুস্থ রাখছি, তেমনই নৈতিকতা ও ধর্মীয় চর্চার মধ্য দিয়ে নিজেদের আত্মিক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, সাহাবায়ে কেরামরা নিজেদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্বের উদাহরণ দেখিয়েছেন সেরকম ভ্রাতৃত্ববোধ আমরা একই হলে যারা থাকি তাদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। যিনি ভালো কাজ করবেন তাকে সহযোগিতা করতে হবে। পাশাপাশি অন্যায়-অপরাধমূলক কোনো কাজ হলে তাদেরকে বুঝিয়ে উপদেশ দিয়ে কল্যাণের দিকে উৎসাহিত করতে হবে। এটিই হলের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাজ হওযা উচিত।
তিনি বলেন, ছাত্রশিবিরকে ট্যাগ করে এমন এমন কিছু বিষয় বলা হয় যা আমাদের জন্য দুঃখজনক। ইবিতে কোনো গাছের ডাল ভেঙে গেলে, কোনো মামার দোকানে পান থেকে চুন খসে গেলে কিংবা কোনো সাইকেলের হাওয়া চলে গেলেও ছাত্রশিবিরকে দোষারোপ করা হয়। অর্থাৎ আমাদের এমন কিছু কাজের সাথে ট্যাগিং করা হয় যেটা আমরা জীবনে চিন্তাও করতে পারিনা। এতে আমরা কষ্ট পাই।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের জীবনে উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এখানে ঠিকাদারি করা, টেন্ডারবাজি করা, দখলদারি করা এসব আমাদের কাজ নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে কেবলমাত্র শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করা, নৈতিকতা সম্পন্ন দায়িত্বশীল মানুষ তৈরি করার মধ্য দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাতে যাওয়া। এর বাইরে আমাদের কোনো উদ্দেশ্য নেই। আপনাদের প্রতি অনুরোধ রইল, ছাত্রশিবিরকে নিয়ে যত কথাই বলা হয়, আপনারা একটু আমাদের বলুন। যাচাই করুন যে আমরা আসলেই এসব কাজ করছি কিনা। এ বিশ্ববিদ্যালয় সবার। সকল ধর্মমতের মানুষের এ বিশ্ববিদ্যালয়। সবাই এখানে নির্বিঘ্নে থাকবে। সবার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অভয়ারণ্য হবে ইনশাআল্লাহ।


