ইবিতে অর্থনীতি ক্লাবের প্রাক বাজেট শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

মিজানুর রহমান, ইবি প্রতিনিধি :
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশের সাম্প্রতিক আর্থিক প্রেক্ষাপট এবং আসন্ন বাজেটে নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনার উদ্দেশ্যে অর্থনীতি বিভাগ ও অর্থনীতি ক্লাবের যৌথ আয়োজনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট বিষয়ক প্রাক বাজেট শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (১৮ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনের ৪৩৫ নাম্বার কক্ষে বেলা ১১টার দিকে বিভাগের কয়েকশত শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থনীতি ক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী মোস্তফা আরীফের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি সভাপতি ড. পার্থ সারথি লস্কর। মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল জলিল পাঠান। এছাড়া আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের সকল শিক্ষক এবং অর্থনীতি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. খাইরুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বিভাগের শিক্ষার্থী মোছা. ছুম্মা খাতুন এবং রাবেয়া খন্দকার।
মূখ্য আলোচক জনাব আব্দুল জলিল পাঠান বলেন, “সমালোচক হিসেবে যখন আমরা বাজেট নিয়ে কথা বলি তখন বিগত বছরে বাজেট কেন কম ছিলো সেটা নিয়ে আলোচনা করি কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি এবারের বাজেটে প্রায় সব খাতে বাজেট কমানো হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে বাজেট ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে বৃদ্ধি করা দরকার। চিকিৎসার জন্য পাশ্ববর্তী দেশগুলোর উপর নির্ভরশীল হতে হয়। এ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। সামরিক খাতে বাজেট বাড়াতে হবে, নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব না। মানবজাতির জন্য এআই একটা বড় থ্রেট। কারণ এআই নির্ভরশীল যেমন জাতিকে উচ্চতর স্থানে অধিষ্ঠিত করতে পারে তেমনি আমাদের মতো দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি করতে পারে। যেটা আমাদের জন্য হুমকি। এজন্য রপ্তানি পন্যের বাজার বাড়াতে হবে। যখন আমাদের ভারী শিল্পায়ন করা দরকার তখনই শিল্প খাতে বাজেট কমানো হয়েছে। শুধু কাঠামো তৈরি না করে জাহাজ, রেলসহ বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন তৈরির শিল্প গড়তে হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। সরকারকে এখনই কৃষি জমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে বারবার বন্যার কারনে অনেক অর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এর স্থায়ী সমাধান বের করতে তাহলে প্রতিবছর খরচ কমে আসবে। সরকার স্বাধীনতার পর থেকে কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়। এটা বন্ধ করতে হবে। নাহলে দূর্নীতি বেড়ে যাবে এবং বাজেটের অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এসময় তিনি আরো বলেন, “উন্নত দেশে যেসব বৃহৎ জাতীয় বাজেট দেয় তার অধিকাংশই ঋন থেকে আসে। কিন্তু আমাদের মতো দেশ ঋন নিয়ে যদি সুষ্ঠু এবং যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে তাহলে ঋনের প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতে পড়বে না।”
এসময় বক্তরা বলেন,”২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট হয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি’র মতো। কারণ দুর্নীতি কমানোর কথা বলে প্রায় প্রতিটি খাতে বরাদ্দ কমিয়েছে কিন্তু অনুন্নয়ন বাজেট বৃদ্ধি করেছে। যেটা দুর্নীতির একটা আখড়া হয়ে উঠবে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বাজেটের সঠিক বাস্তবায়ন না করলে বাজেট বৃদ্ধি করে কোন লাভ নেই। বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো থেকে এক লক্ষ কোটি টাকা উধাও হলো কীভাবে? কারণ বাজেটের সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি। আমার কথায় দেশের দুর্নীতি বন্ধ হবে না, রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের বাজেট বাস্তবায়নের পদ্ধতিগুলো সংস্কার করতে হবে।