ইবিতে জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তিতে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় ও স্মৃতিচারণ
মিজানুর রহমান, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) জুলাই বিপ্লবের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ছাত্র শিক্ষক সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে শহীদ পরিবারের সদস্যের সাথে মত বিনিময় ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
রবিবার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
এ সময় জুলাই বিপ্লবের প্রথম বর্ষপুর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং জুলাই বিপ্লবে নিহত, আহতদের পরিবার উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের জন্য দোয়া করা হয়।
এসময় শহিদ সবুজের স্ত্রী রেশমা খাতুন বলেন, আমরা স্বামী জীবন দিয়েছে দেশের জন্য, জাতির জন্য সেটা যাতে দেশ মনে রাখে। আমরা হাসবেন্ডের ব্যাপারে মামলা করেছি, ১১ জন গ্রেফতার করেছে, কিন্তু এখনও বিচার করা হয়নি। আমরা কিছু চাই না তবে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ফাঁসিতে ঝুলাতে হবে। সকল শহিদ পরিবারের প্রতি সুনজর রাখবেন। আমি সুবিচার চাই এবং খুনিদেরকে ফাঁসিতে ঝুলাতে চাই।
শহিদ ইউসুফের মেয়ে শিমা খাতুন বলেন, আমিও ঘরে বসে থাকতে পারিনি, অংশগ্রহণ করেছি। আব্বা যখন গুলি খেয়ে মারা যান, তখন গিয়ে দেখি একসাথে ৩ জন গুলিবিদ্ধ। পা দেখেই বুঝতে পেরেছি তিনি আব্বা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখা সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, শহিদদের কথাগুলো শুনলে পরবর্তীতে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। আজকের দিনে শিক্ষকরা আমাদের আন্দোলনে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছিলেন। আমরা যেন জুলাইকে হারাতে না দিই। বিভাজনের ষড়যন্ত্রে পা না বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, রক্তের বিনিময়ে সবসময় পরিবর্তন সাধিত হয়। আর রক্ত দিতে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি জাতিকে জাগ্রত হতে হয়। ঐক্যবদ্ধ না হলে ফ্যাসিস্ট শাসনকে উৎপাটিত করা যেত না। আমাদের জাতি যে দেশ পেয়েছে সেই দেশ আর পেছনে ফিরে যাবে না, আর গণতন্ত্রহীন হবে না, বৈষম্যমূলক হবে না। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিজেকে নিবেদিত করতে হবে।
এসময় তিনি সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান করে বলেন, শহিদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা কোনো একক ব্যক্তি বা দলের পক্ষে সম্ভব নয়। আপনারা একটি সুন্দর দেশ গড়ুন, না হলে শহিদের রক্তের ঋণ শোধ হবে না।
তিনি আরো বলেন, আমরা চলে যাবো কিন্তু আগামী প্রজন্ম যেন শহিদ পারিবারকে স্মরণে রাখে। তাদের যেন আমরা ভুলে না যাই। ইতোমধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা শহিদের নামে নামকরণ করেছি। ক্যাম্পাসে আগামীর স্থাপনা গুলো ছাত্র-শিক্ষদের মতামতের ভিত্তিতে শহিদ ও ইবি’র বরেণ্য ব্যক্তিত্ব যারা এই ক্যাম্পাসের জন্য রক্ত দিয়েছিল তাদের নামেই নামকরণ করা হবে।
আমরা সকলে আজীবন শহিদের জন্য দোয়া করবো, তারা আন্দোলন না করলে আমি এখানে থাকতাম না। শহিদের রক্তের বিনিময়ে একদল বেঁচে যায়, তাদের দায়িত্ব থাকে সেই রক্তের ঋণকে শোধ করা। আমরা যেন সেই রক্তে ঋণ শোধ করতে পারি সে জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করছি। সরকার যেন জুলাইয়ে স্পিটকে ও শহিদদের ভুলে না যায়। না হলে কিন্তু আবার সেই ফ্যাসিস্ট মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। আমাদেরকে সকল ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধ ভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠান শেষে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের উপহার প্রদান করা হয়।