চাঁদা না পেয়ে স্কুলশিক্ষককে অপহরণ, মধ্যযুগীয় নির্যাতন: বরগুনার আমতলীতে চাঞ্চল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরগুনা
বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের উপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় পুরো এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জেরে এবং চাঁদা না পেয়ে গত ২১ অক্টোবর রাতে বিদ্যালয়ের হোস্টেল থেকে তাকে অপহরণ করে রাতভর বর্বরোচিত নির্যাতন চালানো হয়। গুরুতর জখমের পাশাপাশি ওই শিক্ষক স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।
⚠️ হোস্টেল থেকে অপহরণ ও রাতভর নির্যাতন:
বিদ্যালয় এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক রফিকুল ইসলাম গত ২১ অক্টোবর রাতে বিদ্যালয় সংলগ্ন হোস্টেলে অবস্থান করছিলেন। রাতে ১০/১২জনের দুর্বৃত্তের একটি দল জোরপূর্বক হোস্টেলে প্রবেশ করে। তারা শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে চাঁদার দাবিতে ভয়ভীতি দেখায়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় দুর্বৃত্তরা তাকে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় না আমি আর কলাবাগানে নিয়ে যায়।
সেখানে তারা রাতভর রড ও লাঠি দিয়ে শিক্ষক রফিকুল ইসলামের উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় বেধড়ক মারধর ও নির্যাতন চালায়। তারা রফিকুল ইসলামের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এক পর্যায়ে রফিকুল ইসলাম তার সোনালী ব্যাংকের একাউন্টে ৮০ হাজার টাকা থাকার কথা স্বীকার করলে দুর্বৃত্তরা তার কাছ থেকে এটিএম কার্ড ও পিন নিয়ে যায় এবং ৮০০০০ টাকা তুলে নেয়। নির্যাতনের ফলে তিনি জ্ঞান হারালে দুর্বৃত্তরা তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
🏥 গুরুতর আহত, শ্রবণশক্তি হারালেন শিক্ষক
নির্যাতনের শিকার শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য আমতলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে তারা তাকে বরিশালে রেফার করেন। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ফিরে আসেন।
কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, “শিক্ষক রফিকুল ইসলামের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং অতিরিক্ত মারধরের ফলে তার দুই কানের শ্রবণশক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে তিনি শুনতে পাচ্ছেন না।
⚖️ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা, অভিযান শুরু
এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় শিক্ষক রফিকুল ইসলামের পক্ষ থেকে গত সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাতে আমতলী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অপহরণ, চাঁদাবাজি ও পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগে প্রধান আসামি মিজানুর রহমান সহ চারজন নামীয় এবং কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা রুজু করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ❝অপহরণ, চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশি অভিযান পুরোদমে চলছে।❞
🗣️ তীব্র নিন্দা ও কঠোর শাস্তির দাবি
শিক্ষকের উপর এমন বর্বরোচিত হামলায় স্থানীয় শিক্ষক সমাজ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে সকল আসামিকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
জেলা শিক্ষক সমিতি বরগুনা, মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক পরিষদ বরগুনা এবং উপজেলা শিক্ষক সমিতি আমতলী সহ সকল শিক্ষক সংগঠন এই ঘটনার প্রতিবাদে জরুরি সভার ডাক দিয়েছে এবং দোষীদের গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে।
এলাকার সুশীল সমাজ এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষকের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে।




