পাথরঘাটায় গৃহবধূর আত্মহত্যা! ষড়যন্ত্রমূলক আসামি করায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন

ইব্রাহীম খলীল, পাথরঘাটা।
বরগুনার পাথরঘাটায় সারা মনি মিম (১৮) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যার ঘটনায় চিকিৎসক ইমাম হোসেনকে ২ নং আসামি করে হয়রানি করার অভিযোগ মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
১২ মে (সোমবার) সকাল ১০ ঘটিকায় ইউনিয়নের লেমুয়া বাজারে শত শত নারী ও পুরুষের উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ইমাম হোসেন রায়হানপুর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো: খলিলুর রহমানের ছেলে।
এর আগে গত (৫ মে) উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় মিমের পরিবার মিমের ২য় স্বামী নাঈমকে ১নং ও চিকিৎসক ইমাম হোসেনকে ২নং সহ মোট ৬ জনকে আসামি করে বরগুনা বিজ্ঞ নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি পরিকল্পিত হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, দীর্ঘদিন পূর্বে প্রবাসী এক ছেলের সাথে মিমের বিয়ে হয়। সেই ছেলে প্রবাসে থাকার সুযোগে চিকিৎসক ইমাম হোসেন কর্তৃক পরিচালিত লেমুয়া বাজারের ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারী নাঈমের সাথে মিমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন পরে মিম বিয়ের দাবিতে নাঈমের বাড়িতে উঠলে স্থানী সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে মিম তার প্রবাসী স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়, পরে তাদের দুজনের বিয়ে হয়। এরপর তাদের সংসার ভালোই চলছিল। এরই মধ্যে মিমের মা পূর্বের প্রবাসী স্বামীর সাথে দেয়ার জন্য মিম ও নাঈমকে বিচ্ছেদের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এদিকে মিম অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ায় তার মা গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ঔষধ নিয়ে ব্যবহার করান। পরে মিম অসুস্থ হয়ে পড়লে তার স্বামীকে জানায়। এ বিষয়টি নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ও মিম আত্মহত্যা করেন বলে জানা গেছে।
মানববন্ধনে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ইমাম হোসেন একজন ভালো ছেলে, তার কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা পেয়েছি, সে কিছুদিন পূর্বে শুভেচ্ছা জানিয়ে রায়হানপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার আশ্বাস দিয়েছেন, সে নির্বাচনী জের ধরেই তাকে আসামি করা হয়, এছাড়াও সে একজন মালিক তার কর্মচারী বাড়িতে কি করলো বা না করলো সে দায়ভার মালিকের কাঁধে আসবে কেন! একটি কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করে ইমাম হোসেনকে ষড়যন্ত্রমূলক আসামি করেছে আমরা এর নিন্দা জানাই। এছাড়াও অবিলম্বে মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহারের দাবি জানাই। এবং প্রশাসনের মাধ্যমে সঠিক তদন্তে করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের দাবি করছি।
মামলার আসামি চিকিৎসক ইমাম হোসেন জানান, নাঈম আমার এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারী, সে আমার অফিসে দীর্ঘ বছর ধরে কাজ করে। শুনেছি বেশ কিছুদিন আগে এক বিবাহিত নারীকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের বিবাহিত জীবনে কোন ঝামেলা থাকলে তা আমার জানার কথা না। আমি সামনে নির্বাচন করতে চাই। বিষয়টি জানার পরে আমার প্রতিপক্ষ এই মামলায় আমাকে ফাঁসিয়েছে। আমিও চাই যারা প্রকৃত দোষী তাদের বিচার হোক।
নাঈমের মা জানান, তিনি মানুষের বাড়ি কাজ করেই সংসার চালান। প্রতিদিনের মতো ছেলে এবং তার বউকে ঘুমে দেখে কাজ করতে চলে যান। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন তার পুত্রবধু আত্মহত্যা করেছে। বাড়িতে এসে জানতে পারেন আত্মহত্যার সময় তার ছেলে নাঈম ঘুমিয়েছিল। তাকে উদ্ধার করে আমরা পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে মিমের মা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
জানতে চাইলে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জানান, আত্নহত্যার ঘটনায় একটি অপমৃত মামলা হয়েছে। এছাড়াও নিহত মিমের পরিবার থেকে বরগুনা নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে, তদন্ত চলছে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।