শিক্ষকতার আড়ালে মন্নান মাস্টারের যত কারসাজি

স্টাফ রিপোর্টার:
শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। একজন শিক্ষক শুধু পড়ান না দেশ ও মানুষের কল্যাণে ভূমিকাও রাখেন। শিক্ষকতার আড়ালে লেবাসী কিছু শিক্ষক আমাদের এ সমাজে আছে, যাদের কারণে আদর্শবান শিক্ষকদেরও মানুষ অসম্মান করে। এমনই একজন শিক্ষক আব্দুল মান্নান (৫৫) ওরফে মন্নান মাস্টার। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা বদরপুর আলিম মাদ্রাসায় ইবতেদায়ী জুনিয়র শিক্ষক পদে চাকুরী করেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদ্রাসার মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে কমিটি ও নেতাদের যোগসাজশে করতেন বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। আওয়ামীলীগের আমলে অত্র প্রতিষ্ঠানে একটি অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছেন তিনি। মাদ্রাসার মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে বেপরোয়া আর মারমুখী আচরণ ছিলো তার নিত্যদিনের সঙ্গী। তার নির্দিষ্ট কোনো রুপ নেই ফায়দা লুটার জন্য যখন যে রুপ ধারণ করা দরকার সে রুপেই নিজেকে উপস্থাপন করতেন তিনি। মন্নান মাস্টারের আর্থিক প্রতারণা ছিলো কৌশলী কোনো প্রমাণ রাখতেন না। প্রমাণের অভাবে তার বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিতে ভয় পেত। কেউ কোনো অভিযোগ দিলে মামলার ভয় দেখাতো। মাদ্রাসার কমিটি ও নেতাদের নাম বিক্রি করে নিয়োগ ও এমপিও বাণিজ্যও করতেন তিনি।
ভূয়া নিয়োগ বাণিজ্যের স্বীকার ভুক্তভোগী স্থানীয় সৌরভের সাথে কথা বলে জানা যায় , অফিস সহকারী পদে চাকুরী দিবে বলে গোপণীয়ভাবে আমার সাথে ৪ লক্ষ টাকা চুক্তি করে। পরে সে আমার কাছ থেকে অগ্রিম অর্থনৈতিক লেনদেনও করে । বাকি টাকা চাকুরী হলে নিবে। উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না।
নিয়োগে টাকা লেনদেনের প্রত্যক্ষদর্শী নাসরুল্লাহ জানান, নিয়োগ দিবে বলে মন্নান মাস্টারের সাথে সৌরভের আর্থিক লেনদেন হয়েছে। সে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা পারিবারিকভাবে তার সাথে বসবো।
দূর থেকে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক হাসান রাজীব বলেন, বদরপুর আলিম মাদ্রাসায় আমার যোগদানের আগে আমার নাম্বার সংগ্রহ করে প্রায় সময় আমাকে কল দিয়ে বিরক্ত করতো মন্নান মাস্টার। এমপিও বিল ধরানের কথা বলে সে প্রতারণা করে আমার কাছ থেকে ১০০০০/- দশ হাজার টাকা নেয়। দূরের শিক্ষক বলে তার কাছ থেকে এই টাকা আদায় করার সাহস পাইনি, বিশেষ করে সে আওয়ালীগ করায়। ৫ই আগস্টের পরেতো সে ধাওয়া খাওয়ার কথা সে কি এখন ঐ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছে। সে আমার সাথে আরো অনেক কিছু করছে আমি এগুলো বলতে চাই না।আমি এখন আমার জেলার একটি প্রতিষ্ঠানে আছি খুব শান্তিতে আছি।
এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বললে তারা জানান, মন্নান মাস্টারের সাথে হাসান রাজীব স্যারের এমপিও বিষয়ে অর্থনৈতিক লেনদেন হয়েছে এটা আমরা জানি। এটা একটা সম্পূর্ন প্রতারণা। পূর্ব হতেই অত্র প্রতিষ্ঠানে প্রভাব খাটিয়ে তিনি এ কাজগুলো করে আসছেন।
এছাড়াও মন্নান মাস্টার নতুন শিক্ষক নিয়োগ হলে কৌশলে তার সাথে সম্পর্ক তৈরী করে ধারের নামে টাকা হাতিয়ে নিতেন। অফিসিয়াল কাজে সহযোগিতার নামেও অর্থনৈতিক সুবিধা নিতেন শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে। আর এসব কাজে মন্নান মাস্টার অধ্যক্ষ, রাজনৈতিক নেতা ও কমিটির কিছু লোককে ব্যবহার করতেন।
তার কর্মস্থল হতে গোপনীয় তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ৫ই আগস্টের পূর্বে তিনি যে প্রতিষ্ঠানের স্টাফদের সাথে ঠুমকো বিষয় নিয়ে প্রায় সময় ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে যেতেন, করতেন অশালীন আচরণ। তার এমন কর্মকান্ডের জন্য কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। সিনিয়র জুনিয়র কাউকেই তিনি মূল্যায়ণ করতেন না। যেই চেয়ারে একজন উপরস্থ কর্মকর্তা বসতেন সেই চেয়ারে তিনি একজন ইবতেদায়ী শাখার জুনিয়র শিক্ষক হয়ে প্রায় সময় বসে প্রভাব বিস্তার করতেন। বিভিন্ন অফিসারদের নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করতেন। মাদ্রাসা বোর্ডের ডিজিকে নিয়েও তিনি নেতিবাচক মন্তব্য করেন। এমনকি অত্র প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পিজি হসপিটালের বিভাগীয় চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. তছলিম উদ্দীনকে নিয়েও নেতিবাচক মন্তব্য ও মামলার ভয় দেখাতেন। অফিস কক্ষকে একটি বিনোদন হাসি তামাশার মঞ্চ বানিয়ে ফেলতেন। তার সহকর্মীদের তিনি তুই তোকারী বেয়াদব বলে হেনস্থা করেছেন। তার কাছে এসব আচরণ অনেকটা স্বাভাবিক আচরণের মতই মনে হতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ৫ই আগস্টের পরে কিছুটা হলেও শান্তিমত শিক্ষকতা করতে পারছি। তার যন্ত্রণায় স্বাভাবিকভাবে আমরা চাকুরী করতে পারি নাই। এখনো তিনি নিজেকে বিএনপি-জামাআত পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন পায়দা লুটার চেষ্টা করছে। বেশীরভাগ সময় তিনি মাদ্রাসায় কমিটি নিয়ে হট্রগোল ও নিজের পছন্দের লোক বসানোর বিভিন্ন কলাকৌশল করে। মন্নান মাস্টার শিক্ষকতা করার চেয়ে কিভাবে কমিটির সদস্য হওয়া যায় এবং কিভাবে নিজের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি করা যায় এটাই ছিল তার প্রধান কাজ। অত্র মাদ্রাসায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করার মূল হোতা মন্নান মাস্টার। তার চালচলন অনেকটা মানসিক প্রতিবন্ধির মত। মন যা চায় সে তাই করে বেড়ায়। কোনো সহকর্মী তার মতের বাহিরে গেলেই তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে তার পেছনে আঠার মত লেগে থাকে। কারো সাথে তার ভালো সম্পর্ক তৈরীর উদ্দেশ্য হচ্ছে তার স্বার্থ উদ্ধার করা।
এলাকাবাসীর সাথে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মন্নান মাস্টার একজন টাউট চিটার টাইপের মাস্টার হিসেবেই এলাকাতে পরিচিত। সে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগসাজশ করে চলতো। ঠুমকো বিষয় নিয়ে মানুষের সাথে মামলা হামলায় জড়িয়ে পড়তো। তার এই মামলা হামলার কারনে তিনি মামলাবাজ মন্নান মাস্টার হিসেবেও এলাকায় পরিচিতি । বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করা তার নেশা। এই টাকা আর তার কাছ থেকে সহজে পাওয়া যেত না। এরকম একজন লোক কিভাবে শিক্ষক হয় আমাদের বুঝে আসে না। আমরা আমাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়াবো নৈতিক শিক্ষা অর্জন করার জন্য। মন্নান মাস্টারের ভিতর শিক্ষক হওয়ার মত এমন কোনো গুন নেই যে আমাদের সন্তানরা তার কাছ থেকে ভালো কিছু শিখবে। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের শিক্ষক চাই না। পূর্ব হতে হয়ে আসা তার এই অভিনব প্রতারণা ও কর্মকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা যায়, ৫ই আগস্টের পূর্বে মন্নান মাস্টার অফিসে এসে তিনি নেতাদের নাম বিক্রি করে বিভিন্ন ফায়দা লুটার চেষ্টা করতেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্নান মাস্টার বলেন,
আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা।
মন্নান মাস্টারের বিষয়ে অধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম বলেন, হাসান রাজীবের সাথে এমপিও করে দিবে বলে তার সাথে আর্থিক লেনদেন হয়েছে এটা আমি জানি। সে আমার সাথে যোগাযোগ ছাড়া তার সাথে লেনদেন করা ঠিক হয়নি। সৌরভের সাথে নিয়োগ সংক্রান্ত অর্থনৈতিক লেনদেন আমি শুনেছি তবে আমি এ বিষয়ে জানি না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।