শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেশকিছু নিদের্শনা জারি করেছে কালাই উপজেলা প্রশাসন

জাহিদুল ইসলাম (জাহিদ) স্টাফ রিপোর্টার,জয়পুরহাট।
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং পরীক্ষায় ভাল ফলাফল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেশকিছু নিদের্শনা জারি করেছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এর পর রাতে বিজ্ঞপ্তিটি তার অফিসিয়াল ফেসবুকে পোস্ট করলে সেখানে অভিভাবক, শিক্ষক এবং সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের নজরে আসে। তারা সময়োপযোগী এরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সেখানে বিভিন্নভাবে তাদের মতামত ব্যক্ত করে ইউএনও’র প্রশংসা করেন।
বিজ্ঞপ্তিটিতে ৮টি বিষয়ে উল্লেখ করে বলা হয়েছে- (১) কোন শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের মোবাইল ফোন/ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেনা। (২) কোন শিক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হলে কোন অবস্থাতেই এস.এস.সি/ দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেনা।
(৩) পরীক্ষায় ভাল ফলাফল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের অর্ধ বার্ষিকী/বার্ষিকী এবং প্রি-টেষ্ট পরীক্ষায় পাশমার্ক হিসেবে ০১ হতে ৮ম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদেরকে প্রতি বিষয়ে নুন্যতম ৫০ নম্বর, ৯ম হতে ১০ম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদেরকে নুন্যতম ৪৫ নম্বর এবং ১১তম হতে ১২ তম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদেরকে নুন্যতম ৪০ নম্বর অর্জন করতে হবে। এলক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক/পাক্ষিক/মাসিক পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। (৪) যৌক্তিক কারণ ব্যতীত কোন শিক্ষার্থী একাধিক্রমে ০৩ (তিন) দিনের বেশী প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলে অবশ্যই প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রশাসন-কে এবং শিক্ষার্থীর অবিভাবককে লিখিতভাবে অবহিত করবেন। (৫) শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য কর্মচারীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধুমপান হতে সম্পূর্ণরুপে বিরত থাকবেন। (৬) কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অশ্লীল অংগ-ভঙ্গি, ব্যঙ্গাত্নক ও কুরুচিপূর্ণ ছবি এবং ভিডিও ধারন ও প্রচার করা যাবেনা। (৭) ইভটিজিং, যৌন হয়রানি, কিশোর গ্যাং ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ তাঁদের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করবেন। কমিটি এসব বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করবে। (৮) কোন শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। ক্লাসের পড়া ক্লাসেই সমাধান করার জন্য যথাসাধ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ইউএনও’র ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট বক্সে আতাউর রহমান নামের এক ব্যক্তি লিখেন, শত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও যেন আপনার ফুসরত নেই বিশ্রাম নেবার। পুরো উপজেলা এবং পৌরসভায় আপনার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষগোচর হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে আপনার গুরুত্ব সবার উপরে এমনটিই আমাদের ধারণা। এটিই এই উপজেলাবাসীর সার্বিক পরিবর্তনে অপরিসীম ভূমিকা রাখবে।
জিল্লুর রহমান নামের একজন লিখেন, ম্যাম, যেমনটা নোটিশ করেছেন তার বাস্তবায়ন হলে ইনশাআল্লাহ আগামী ২০২৬ সাল হতেই কালাই থানার শিক্ষার্থীদের বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফলে ভাল পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে আশা রাখি।
আবুল বাশার নামের একজন লিখেন, অন্তত মাসে দুদিন দুটি করে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করলে, এই সমস্যাগুলো নিশ্চিত কমে যাবে। এই তদারকির দায়িত্ব শিক্ষা অফিসারকে দিন। আপনি মনিটরিং করুন। তাতেই অনেক কাজ হবে। প্লিজ, শিক্ষার উন্নতি করুণ, জাতির উন্নতির জন্য শিক্ষার উন্নতির বিকল্প নেই। জাতিকে রক্ষা করুন।
নুরল ইসলাম লিখেন, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা পর্ষদ/ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে হবে সৎ, যোগ্য ও কর্মঠ। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস থাকতে হবে। তাহলেই ইউএনও মহোদয়ের উদ্যোগ সহজেই সফল হবে। আশা করি, কালাই উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিগণ বিষয়টিকে স্বাগত জানাবেন।
মোস্তাক আহম্মেদ রাতুল লিখেন, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্যার কালাইয়ে এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গরা সেখানে নানাভাবে প্রশংসা ও পরামর্শ প্রদান করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান বলেন, বিগত এসএসসি/দাখিল ও কারিগরি বোর্ডের সমমানের পরীক্ষায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর ফলাফল এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ হঠাৎ পরিদর্শনে প্রাপ্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে । এরই মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান এ গিয়ে একটি ক্লাশে মাত্র ২জন শিক্ষার্থী পাওয়া যায়। দেখাযায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মোবাইল চালাচ্ছে । তিনি বলেন, শুধুমাত্র প্রশাসনের নজরদারি নয়, শিক্ষক- শিক্ষার্থী -অভিভাবক সকলের সচেতনতা ও সদিচ্ছার প্রয়োজন। তাই তিনি এ বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদেরকে অনুরোধ জানিয়েছেন।