হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের আমতুয়া এলাকার উত্তর মাদার্শা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আলমের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটাল ল্যাবের সরকারি সম্পদ (ল্যাপটপ) আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে এ ঘটনা ঘটলেও নেয়া হয়নি কোন আইনি পদক্ষেপ। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকেও বিষয়টি অবগত করা হয়নি। স্থানীয়দের তথ্যমতে বিষয়টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লেও দীর্ঘদিন ধরে ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকায় ম্যানেজিং কমিটিসহ অন্যান্যদের ম্যানেজ করে নেয় ওই প্রধান শিক্ষক। ধাপাচাপা পড়ে যায় সরকারি সম্পদ নয়ছয়ে।
সরেজমিনে জানা গেছে, ২০১৫/১৬ সালে তৎকালিন সরকার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ল্যাবের জন্য ১৭ টি ল্যাপটপ প্রদান করেন। নিয়মিত শিক্ষাদানের কথা থাকলেও সম্পূর্ণ নিজের মত করে পরিচালনা করেন ডিজিটাল ক্লাস। অনেক শিক্ষার্থী শেখার আগ্রহ প্রকাশ করলেও প্রধান শিক্ষকের একগুয়েমি মনোভাবের জন্য তা পুরোপুরিভাবে সম্ভব হয়নি। এমনকি অনেক শিক্ষার্থীর কাছে মাসিক টাকা দাবি করারও অভিযোগ আছে। এদিকে ২০২২ সালে শিক্ষার্থীদের ইকোনোমিক আইডি’র আওতায় আনতে পাঁচটি ল্যাপটপ দেয়া হয় পাঁচ শিক্ষককে। নিয়ম অনুযায়ী অফিসে বসে কাজ করার নির্দেশনা থাকলেও ওই শিক্ষকরা সরকার প্রদত্ত ল্যাপটপ নিয়ে যান বাড়িতে। পরবর্তীতে কাজ শেষে পাঁচটি ল্যাপটপ শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে জমা দিলেও হঠাৎ একটি উদাও হয়ে যায়। গুজব উঠে বিদ্যালয় থেকে ল্যাপটপ চুরির। নিজের দায় এড়াতে অভিযুক্ত চুরির অভিযোগ তুলে দেন শিক্ষকদের কাঁধে। তবে কারো বিরুদ্ধেই নেননি কোন আইনি পদক্ষেপ। জানানো হয়নি তৎকালিন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে। ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশনে চুরি লিখেই দায় এড়িয়ে যান তিনি। যা সম্পূর্ণ আইন পরিপহ্নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, ওই প্রধান শিক্ষক বিগত সরকারের আমলে এতটা প্রভাবশালী ছিলেন তার কোন অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদের সাহস পেতেন না। যে কোন উপায়ে ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে রাখতেন। বিদ্যালয়ের ফান্ডে প্রায় কোটি টাকা থাকলেও তার কোন সঠিক হিসাব দিতেন না। কখনও অডিট আসলেও নয়ছয় করে হিসাব দিয়ে দিতেন। ওই অভিভাবকের দাবি বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা ব্যাংকে এফডিআর করা আছে নিশ্চয়ই প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট লভ্যাংশ আসে। তাহলে ওই টাকা কোথায় খতিয়ে দেখা হোক। সদ্য শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীর এক অভিভাবক জানান, দশম শ্রেণীর মডেল টেষ্টে অকৃতকার্য কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে জামিনের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন ওই প্রধান শিক্ষক। এদিকে সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকায় ডিজিটাল ল্যাবের বেহাল দশা শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা নিয়েও বিরুপ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তিনি সাংবাদিকদের করা প্রতিবেদনকে ভুয়া বলেও অবহিত করেন।
জানতে চাইলে ল্যাপটপ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে চুরি হয়েছে দাবি করে তৎকালিন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির উপর দোষ চাপিয়ে বলেন, উনার পরামর্শক্রমে কিছু করা হয়নি। এসএসসি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সত্যতা স্বীকার করলেও কৃতকার্য হলে ফেরৎ দেয়া হবে বলে জানান। দীর্ঘদিন ধরে একই বিদ্যালয়ে কর্মকর্ত এ প্রশ্নের জবাবে কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। আর্থিক লেনদেনে গরমিলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিটি খাতের হিসাব লিপিবদ্ধ আছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, সরকারি সম্পদ নয় কেবল বিদ্যালয়ে কোন চুরি ডাকাতি হলে নিয়ম হল নাইট গার্ডকে উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষককে থানায় জিডি করা। একটি ল্যাপটপ উদাও কিন্তু কোন আইনি পদক্ষেপ না নেয়া অবশ্যই এটা দুঃখজনক। অভিযুক্ত দায় এড়াতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থায় প্রয়োজনে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে। একইসাথে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলেও জানান শিক্ষা কর্মকর্তা। এসময় প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই অভিযুক্তকে যাবতীয় অভিযোগের প্রেক্ষিতে আগামি তিনদিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশনা দেন ওই কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।