মামলায় হেরে গিয়ে শ্রমিকলীগ নেতার নেতৃত্বে সমাজসেবক নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে পূর্বপরিকল্পিত, মিথ্যা-বানোয়াট মামলা খারিজ হওয়ায় স্থানীয় সমাজসেবক নাসির উদ্দীনের সম্মানহানির উদ্দেশ্যে মানববন্ধন করেছে ঢাকার তেজগাঁও থানা শ্রমিকলীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. জসিম উদ্দীনের নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও শ্রমিকলীগের বেশকিছু নেতাকর্মী।
রোববার সকালে উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের নূরিয়া দাখিল মাদ্রাসার সামনের রাস্তায় এ মানববন্ধন হয়। বিষয়টি আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে নিশ্চিত করেছেন বালিপাড়ার ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাবুল।
এতে উপস্থিত ছিলেন বালিপাড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি গাফফার হাওলাদার, সহ-সভাপতি হাসেম হাওলাদার, বেলায়েত বয়াতী, যুগ্ম সম্পাদক সরোয়ার হাওলাদার, প্রচার সম্পাদক আ. রহিম ফকির, সদস্য জিয়া হাওলাদার, ডালিম হাওলাদার, ইসমাইল, শাহাআলী বেপারী, আ. রব হাওলাদার, বালিপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি বাপ্পি হাওলাদার, চন্ডিপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা রানা, যুবলীগ নেতা সোহেল গাজী, ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি রাসেল সিকদার, রুবেল গাজী, তেজগাঁও থানা শ্রমিকলীগ নেতা রাজু হাওলাদার, শ্রমিকলীগ নেতা গিয়াস হাওলাদার ও কর্মী বাপ্পী হাওলাদারসহ ভাড়াটিয়া কিছু নারী-পুরুষ এনে মানববন্ধন করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, গত বছর (০৩ নভেম্বর) ওই শ্রমিকলীগ নেতা জসিম উদ্দিনের মাদক ব্যবসায় বাঁধা দেন নাসির উদ্দিন। সমাজসেবক নাসির উদ্দিনের কারণে মাদক ব্যবসা করতে না দুই সন্তানের জননী রিজিয়া আক্তার (৩২) নামে তালাকপ্রাপ্ত এক নারীকে দিয়ে নাসির উদ্দীনের বিরুদ্ধে খুলনা জেলার নারী ও শিশু ট্রাইবুনাল নং-১ আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা করান। পিবিআইকে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। ঘটনার স্থান খুলনা হলেও একজন স্বাক্ষী বাদে সকল স্বাক্ষী ইন্দুরকানী উপজেলার পশ্চিম বালিপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা। খুলনার একমাত্র স্বাক্ষী বাদীর আপন চাচাতো বোন শামীমা। স্বাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, মামলায় উল্লিখিত ২৩ অক্টোবর ২০২৪ দুপুর থেকে ২৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত বাদী তার খুলনার বাড়ীতে ছিল। ঘটনা সম্পর্কে বাদী তাকে কিছুই জানায়নি। ২৫ /৩/২৫ তারিখ পিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। এর পর থেকে উদ্দিন আরো বেপরোয়া হন।
এদিকে নাসির উদ্দিন অভিযোগ করেন, কুরবানীর ঈদের পরেরদিন হত্যার উদ্দেশ্যে জসিম উদ্দীনের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী পশ্চিম বালিপাড়া-চৌকিদার হাট সংযোগ ব্রীজের কাছে মোশাররফ হোসেন হাওলাদারের বাড়ীর সামনে তার উপর হামলা করে। সেখানে তার সঙ্গে থাকা ৭ জন আহত হয়। জীবন রক্ষার্থে একপর্যায়ে মোশাররফ হোসেন হাওলাদারের ঘরে আশ্রয় নিলে সেখানেও তারা হামলা করে। পরে ইন্দুরকানী থানার পুলিশ এসে তাদেরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। বর্তমানে নাসির উদ্দীন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এছাড়াও মানববন্ধনে অংশ গ্রহণকারী একাধিক ব্যক্তি জানান, আমাদেরকে ভুল বুঝিয়ে এখানে উপস্থিত করা হয়। এবং জসিম উদ্দীন এলাকায় ভয়ের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। নাসির উদ্দীনের ওপর হামলার ঘটনায় কেউ যাতে স্বাক্ষী না দেয় সে জন্য বাড়ী বাড়ী গিয়ে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেন তারা।
অভিযুক্ত শ্রমিকলীগ নেতা জসিম উদ্দীন জানান, আমার নামে নাসির উদ্দীন ৭টি মামলা করেছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেওয়ায় সে আমাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। যেকারণে আমি মানববন্ধন করেছি। সাংবাদিকরা অভিযুক্তের কাছে ৭টি মামলার কাগজপত্র চাইলে সে একটি জিডির কপি ছাড়া অন্য কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
এ বিষয় নাসির উদ্দীন বলেন, শ্রমিকলীগ নেতা একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কিছু প্রভাবশালী লোকদের প্রশ্রয়ে আমার নামে চরিত্রহনন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ওই নারীকে প্রলুব্ধ করে একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। তদন্ত শেষে আদালত অভিযোগটি খারিজ করে দিয়েছে। তার মাদকসাম্রাজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে জসিম উদ্দীন এই মানববন্ধন করেছে। এছাড়াও আমাকে হয়রানি করতে আদালতের নির্দেশকে উপেক্ষা করে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনে আওয়ামীলীগ, মাদক ব্যবসায়ী এবং ভাড়াটিয়া লোকদের নিয়ে মানববন্ধন করে।
বালিপাড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, নাসির উদ্দীনের উপর হামলার বিষয় মিমাংসার কথা ছিল। পরে হামলাকারীরা শ্রমিকলীগ নেতা জসিমের নেতৃত্বে নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের লোকদের নিয়ে মানববন্ধন করেছে শুনেছি। বর্তমান সময়ে এরকম ঘটনা যেহেতু ঘটেছে, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এলাকায় কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দেয়া যাবে না।
ইন্দুরকানী থানার ওসি মো. মারুফ হোসেন জানান, মানববন্ধন ও হামলার ঘটনায় জড়িত দু’পক্ষই অভিযোগ দিলে গ্রহণ করা হবে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।