শার্শার সীমান্তবর্তী গোগা ও পুটখালী’র ৬টি স’মিল বন্ধ করলো-বিজিবি

জাকির হোসেন, শার্শা প্রতিনিধি :
যশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী গোগা ও বেনাপোলের পুটখালী ইউনিয়নের বারোপোতা বাজারে পরিবেশ আইনবিরোধী ও বন বিভাগের অনুমোদনহীন অবৈধ ৬টি কাঠ কাটানো করাত কল (স-মিল) বন্ধ করে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর ফলে বিপাকে পড়েছে সাধারন মানুষ ও ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা। কর্ম হারিয়েছে প্রায় দুই শতাধিক শ্রমজীবী মানুষ। বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের ফার্নিচারের দোকান ও কাঠ ব্যবসা।
তবে বিজিবি বলছে করাত কল আইনে সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোন করাত কল স্থাপন থাকতে পারবে না বিধায় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অবৈধ করাত কল গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগিদের অভিযোগ সম্প্রতি কোনো প্রকার পূর্বনোটিশ ছাড়াই শার্শা উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে সীমান্তের বিজিবি গোগা বাজারের ৪টি ও পুটখালী ইউনিয়নের বারোপোতা বাজারের ২টি কাঠ কাটানো স-মিল বন্ধ করে দেয়। যে কারনে গোগা ও পুটখালী এলাকায় কাঠ ও ফার্নিচার ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে। হঠাৎ মিল বন্ধ হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে বহু দোকান, মাঝপথে থেমে গেছে কাঠের কাজ, বেকার হয়ে পড়েছে অসংখ্য পরিবার।
এ ব্যাপারে গোগা বাজারের ফার্ণিচার ব্যবসায়ী কবির হোসেন, মুরসালিন ও আলমাস হোসেন জানান, হঠাৎ করে গোগা বাজারের ৪টি করাত কল বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের ফার্নিচার ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে তারা ফার্নিচার ব্যবসা করে আসছে। তাদের মূল কাঁচামাল বিভিন্ন ধরনের কাঠ গোগা বাজার থেকে ক্রয় করে তা গোগা বাজারের করাত কলে কেটে ফার্নিচার তৈরী করে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। বিজিবি সদস্যরা তাদের বাজারের করাত কল বন্ধ করে দেওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছে। তাদের অভিযোগ গোগা থেকে কাঠ ক্রয় করে তারা বেনাপোল, শার্শা, নাভারন ও বাগআঁচড়া বাজারে নিয়ে কাটাতে অনেক ব্যয় ও সময়ের ব্যাপার। যা তাদের জন্য অনেক আর্থিক ক্ষতি।
এ ব্যাপারে গোগা বাজারের ইমন স-মিলের মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সে তার বাপ দাদার আমল থেকে গত ৪০/৪৫ বছর ধরে করাত কল দিয়ে কাঠ কাটানো ব্যবসা করে আসছি। কোন আগাম নোটিশ ছাড়াই বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের মিল বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, গোগার ৪ টি স-মিল ও ২৫/৩০টি ফার্নিচারের দোকানের প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। অনেক সাধারন মানুষের ঘরের দরজা, জানালার কাঠ মিলে পড়ে আছে। অনেক ব্যাপারীর কাঠ বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। ভুক্তভোগিরা পূনরায় মিল গুলো চালু করার অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য শার্শা উপজেলা বন বিভাগের বন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইউনুছ আলীর কাছে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শওকত মেহেদী সেতু বলেন, মূলত বিষয়টি বিজিবি’র। ২০০২ সালের করাত কল আইনের সংশোধনী ২০১২ মোতাবেক সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোন করাত কলের স্থাপনা থাকতে পারবে না মর্মে সীমান্তের করাত কল গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান।
এ ব্যাপারে খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল খুরশিদ আনোয়ার বলেন, ২০০২ সালের করাত কল আইনের সংশোধনী ২০১২ মোতাবেক সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোন করাত কল স্থাপন থাকতে পারবে না মর্মে সীমান্তের করাত কল গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা তাদের কোন ব্যক্তিগত বিষয় নয় বলে জানান তিনি।
তবে স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই করাতকল গুলো তাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। আইনের প্রয়োগ হলেও বিকল্প ব্যবস্থা বা পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ায় তারা আজ দিশেহারা। ভুক্তভোগীরা দ্রুত মিলগুলো পুনরায় চালুর অনুমতি এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের আহবান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি।