সারাদেশ

দেবীগঞ্জে ভাটা নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই ভাইয়ের কাছে প্রতারণা শিকার আরেক ভুক্তভোগী 

একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড়
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে ইটভাটাকে কেন্দ্র করে এক অংশীদারের কারনে আরেক অংশীদারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ উঠেছে।
মেসার্স জে সি ডি ইট ভাটাটি দেবীগঞ্জ উপজেলার দন্ডপাল ইউনিয়নের ব্যাংকহাড়ীতে অবস্থিত।
ইটভাটা পরিচালনার জন্য ললিত শঙ্কর রায়, গোকুল চন্দ্র রায়, নিতাই চন্দ্র রায় ও অমৃত চন্দ্র রায় একপক্ষ এবং দ্বিতীয় পক্ষ চৈতা রায়, জিতেন্দ্র নাথ রায় ও ধীমান দে সরকার চুক্তিপত্র করেন।
চুক্তিপত্র হওয়ার পরে ধীমান দে সরকার এফিডেফিট এর মাধ্যমে চৈতা রায় ও জিতেন্দ্রনাথ রায় কে নাদাবী পত্র প্রদান করেন। যার কারণে ওই ভাটায় ধীমান দে সরকারের কোন অংশ থাকেনা। চৈতা রায় ও জিতেন্দ্র নাথ রায় ভাটার মালিকানা পুরোপুরি হন। এরপর ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই ইটভাটা বিক্রয়ের হলফনামা করা হয়। সে হলকনামায় দেখা যায় চৈতা রায় ইট ভাটাটির তার ৫০ ভাগ অংশ মনোরঞ্জন রায় ও দক্ষিণারঞ্জন রায়কে মালিকানা হস্তান্তর করেন।
এরপর ভাটাটির বৈধ মালিক হন ২ পক্ষ। ৫০ ভাগের অংশীদার জিতেন্দ্র নাথ রায় ও অপর ৫০ ভাগের অংশীদার হন মনোরঞ্জন রায় ও দক্ষিণারঞ্জন রায়।
এরপর ইট ভাটায় তারা কার্যক্রম শুরু করে। পরে তাদের মধ্যে দ্বন্ধ দেখা দিলে ভাটার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে ভাটাটির চুড়ান্ত হিসাব করে মনোরঞ্জন রায় ও দক্ষিণারঞ্জন রায় একক ভাবে ভাটার কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন এবং জীতেন্দ্র নাথকে তার অংশের মালিকানা বাবদ ৪০ লক্ষ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ওই ৪০ লক্ষ টাকা দিতে তালবাহানা শুরু করে মনোরঞ্জন রায় ও দক্ষিণারঞ্জন রায়। ভাটার মালিকানার ৪০ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রথম বার সালিশ করা হয় গত বছরের ১৫ নভেম্বর। সালিশটি করেন ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও বোদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল্লাহ সফি। সেখানে ৪০ লক্ষ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। রায়টি উভয় পক্ষই মেনে নেয়।
সালিশে মীমাংসা হওয়ার এক বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি ও মিমাংসার টাকা দেননি মনোরঞ্জন রায় ও দক্ষিণা রায়। এক বছর পার হওয়ার পর পুনরায় ভাটার মৌসুম আসার সময় হলেও মুলধনের ৪০ লক্ষ টাকা ও এক বছরের ভাটার লাভাংশ প্রদান করেননি তারা। যার কারনে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জিতেন্দ্রনাথ রায়। এরপরও আরো দু’বার গত মাসে বসা হয় মিমাংসার জন্য। উদ্যোগ নেওয়া হয় সেখানেও কোন মিমাংসা হয়নি।
মনোরঞ্জন রায় একাধিক বার ফোন দেয়া হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তার আরেক ভাই দক্ষিণা রন্জন জানান, ভাটায় আমাদের যে পরিমান টাকা বিনিয়োগ করা আছে সে টাকা আমাদেরকে দিয়ে দিলে আমরা ভাটা হতে চলে আসবো। আমরা ভাটা চালাবো না।
ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও বোদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল্লাহ সফি জানান, আমার এখানে বসে দু পক্ষের বিরোধটি নিষ্পত্তির চেষ্টা করি। গত বছরেই ৪০ লক্ষ টাকা জিতেন্দ্র নাথ রায়কে দেয়ার জন্য মনোরন্জনকে দিতে বলা হয়েছিল। টাকা দেয়ার বর মনোরন্জন ও দক্ষিণা রায় ভাটা পরিচালনা করবে। কিন্তু টাকা না দেয়ার কারনে তার সমাধান হয়নি। এবারও ২ বার বসা হয়েছে। সেখানেও পূর্বের রায় বহাল থাকে। সেখানেও তারা টাকা না দেয়ার কারনে কোন সুরাহা হয়নি।
জানা যায়, চৈতা রায় পঞ্চগড় আমলী আদালতে জীতেন্দ্র নাথ রায়ের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২ জানুয়ারী  মামলাও করেন। যার নম্বর সিআর ১৯/২৫। ৮৩ লক্ষ ৩১ হাজার ৯০৪ টাকা দাবি করে এ মামলা করা হয়। তবে জানা যায় এ টাকার কোন বৈধ কাগজপত্র নাই। বিনা ডকুমেন্টসে মামলা দায়ের করে। হয়রানী করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে জানান জিতেন্দ্র নাথ রায়।
তিনি বলেন, চৈতা রায়ের কোন অংশ নাই ভাটার মধ্যে। হয়রানী করার জন্যই সে মামলা করেছে। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করতেছেন।
উল্লেখ্য, চৈতারা রায় চৈতার নামে একটি মামলাও হয় যশোর জেলার আমলী আদালতে। মামলায় দ্বিতীয় আসামী হলো তার ভাই বীরেন্দ্রনাথ রায়। কয়লা আমদানি কারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজের মালিক রুহুল আমিন বাদী হয়ে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারী এই মামলা দায়ের করেন। চৈতারা রায় ইটের ভাটা পরিচালনা করার সময় বাকিতে কয়লা নিয়ে আসে। কয়লা বিক্রির ৩০ লক্ষ ৫০ হাজার ৬৩১ টাকা আদায়ের জন্য এ মামলা দায়ের করেন রুহুল আমিন। মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

সারাদেশ

মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হলেন সাব্বির আহমেদ সামাদ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে প্রচার সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার একনিষ্ঠ ও ত্যাগী ছাত্রনেতা সাব্বির আহমেদ সামাদ।
সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,