সারাদেশ

কমলগঞ্জে ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন

জায়েদ আহমেদ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর রহিমপুর ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বরপুর গ্রামে সংঘটিত আলোচিত ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম রাফি (২৬) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ । গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভাই হত্যাকারী মাদ্রাসা ছাত্র রানাকে ( ছদ্মনাম)।
সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ জানায়, আলোচিত এ হত্যা ঘটনার পরপরই মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, শ্রীমঙ্গল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান এবং কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবিরসহ থানার একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং প্রাথমিকভাবে হত্যার কারণ ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ গোপন সোর্স, তথ্য প্রযুক্তি, এলাকাবাসীর বক্তব্য এবং আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় নিহতের ছোট ভাই রানাকে (ছদ্ম নাম, বয়স ১৬) ঘটনার দিনই (৯ আগস্ট) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কমলগঞ্জ থানার হেফাজতে নেয়। পরবর্তীতে নিহতের স্ত্রী এবং আশেপাশের মানুষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রবিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় সে তার ভাইকে ঘুমের মধ্যে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত রানা জানায়, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাত অনুমানিক ৮ ঘটিকার সময় তার বড় ভাই নিহত রাফির কাছে সে ৫০০ টাকা চায়। রাফি ছোট ভাইকে টাকা না দিয়ে গালিগালাজ এবং দুর্ব্যবহার করে। এই ঘটনায় বড় ভাইয়ের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে রানা। পরের দিন শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ঘাতক ছোট ভাই দেখে তার মা বাড়িতে নাই। বাড়িতে স্ত্রী না থাকায় সেদিন রাফির ঘরের দরজাও খোলা রেখেই রাফি ঘুমিয়ে ছিল।
এ সুযোগে আগের রাতের ঘটনায় ভাইয়ের উপর রাগের বশবর্তী হয়ে খাটের নিচে থাকা ধারালো দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় বড় ভাই রাফিকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর ঘাতক রানা হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা বেসিনে ধুয়ে পরিস্কার করে পুনরায় খাটের নিচে রেখে দেয় এবং তার পরনে থাকা রক্তমাখা লুঙ্গিও খাটের নিচে রেখে দেয়। ঘটনার পর সে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে থাকে। শুধু ৫০০ টাকা প্রদান না করার ঘটনাই এ হত্যাকান্ডের পেছনে একমাত্র কারন নয়। নিহত রাফির বাবার স্বপ্ন ছিল ছোট ছেলে রানা (ছদ্মনাম) মাদ্রাসায় পড়াশোনা করবে, আলেম হবে। কিন্তু রানার পড়াশোনার প্রতি উদাসীনতা ছিল। চার বছর আগে রাফিদের বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই হিসেবে রাফিই ছিল ছোট ভাইয়ের অভিভাবক। রাফি চাইতো তার ছোট ভাই বাড়িতে না থেকে মাদ্রাসায় থেকে পড়াশোনা করবে। কিন্তু তার ভাই মাদ্রাসা না থেকে বাড়িতেই বেশী থাকত। এসব কারনে অভিভাবক হিসেবে বড় ভাই রাফি প্রায়ই তার ছোট ভাইকে শাসন করত। কিন্তু বড় ভাইয়ের শাসন সে মেনে নিতে পারেনি। এছাড়া নিহত রাফি পরিবারের অমতে প্রেম করে বিয়ে করে। এই বিয়েতে রাফির পরিবার বা আত্মীয় স্বজন কারোরই মত ছিল না। বিয়ের পর থেকে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে রাফির স্ত্রীর সাথে রাফির মা ও ভাইয়ের কিছু টানাপোড়নও ছিল। প্রায়ই দেবর-ভাবী এবং ভাইয়ের সাথে পারিবারিক অশান্তি বিরাজ করতো। এসব নিয়ে বড় ভাইয়ের উপর ক্ষোভ বাড়তে থাকে ঘাতক রানার। যেটা শেষ পর্যন্ত হত্যার মাধ্যমে শেষ হয়।
ঘাতক রানাকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা এবং তার ঘরের খাটের নিচ থেকে তার রক্তমাখা লুঙ্গি উদ্ধার করা হয়েছে। আলোচিত এ হত্যকান্ডের ঘটনায় ভিকটিমের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় ১০ আগস্ট একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

সারাদেশ

মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হলেন সাব্বির আহমেদ সামাদ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে প্রচার সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার একনিষ্ঠ ও ত্যাগী ছাত্রনেতা সাব্বির আহমেদ সামাদ।
সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,