“সচেতন না হলে করোনা ও মশা বিপদের কারণ হবে”:- মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন

ইসমাইল ইমন চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
নতুন প্রজাতির করোনা ভাইরাস ‘অমিক্রন এক্স বিবি’ নিয়ে চট্টগ্রামে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
রবিবার নগর ভবনের চসিক সম্মেলন কক্ষেচট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে প্রস্তুতিমূলক সমন্বয় সভা শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, “কোভিডের এই ধরনটি পূর্বের ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের চাইতে বেশি শক্তিশালী। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে ১০০-এর বেশি রোগী আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৬ জনেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন।”
মেয়র বলেন, “এই ভাইরাসটি কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা বোঝার পরও আমরা অনেকেই উদাসীন। আমি নিজে পুরো শহর পরিদর্শন করে দেখেছি—মানুষ এখনো যথাযথভাবে মাস্ক পরছে না, স্যানিটাইজার ব্যবহার করছে না, নিরাপদ দূরত্ব মানছে না। এ অবস্থায় ব্যাপক সচেতনতা জরুরি।”
মেয়র আরও বলেন, “নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা এবং দূরত্ব বজায় রাখলেই আমরা এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে পারি।”
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধেও সিটি কর্পোরেশন জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, “এই দুটি রোগই মশাবাহিত। গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন মাসব্যাপী এক বিশেষ ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ চালু করা হয়েছে। আমরা নতুন একটি উন্নতমানের ওষুধ এনেছি, যা যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো থেকে আমদানি করা হয়েছে এবং এটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।”
মেয়র বলেন, “ডেঙ্গুর নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো সাধারণত স্বচ্ছ পানিতে জন্ম নেয়। বাড়ির আশপাশে প্লাস্টিক বোতল, ডাবের খোসা, পলিথিন বা নির্মাণসামগ্রীর কন্টেনারে পানি জমে থাকলে সেখানে এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে। এমনকি এক বা দুই মিলিলিটার পানিতেও এই মশার জন্ম হতে পারে।”
মেয়র সতর্ক করেন, “বর্ষার এই সময়ে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রতিটি বাসায় যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নির্মাণাধীন ভবনের সামগ্রী ঢেকে রাখা, ফুলের টব, এসি পাইপের পানি এসবের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।”
ডা. শাহাদাত বলেন, “ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা শুধু জনসচেতনতা গড়েই থেমে নেই। লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, ব্যানার-ফেস্টুনের পাশাপাশি আমরা ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালাচ্ছি। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডও হতে পারে।”
মেয়র জানান, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরই ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল নির্ধারণ করেছি। এসব হাসপাতালে এন্টিজেন পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হচ্ছে। করোনার জন্য আমরা আইসোলেশন সেন্টার চালু করেছি, যেখানে রয়েছে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, চিকিৎসক ও নার্স।”
তিনি বলেন, “করোনা শনাক্তে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট ও ডেঙ্গু শনাক্তে পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা সেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে। আমরা বিনামূল্যে করোনার ভ্যাকসিনও দিচ্ছি, যারা গত এক বছরে বুস্টার ডোজ নেয়নি, তারা এখন নিতে পারছে।”
মেয়র আরও বলেন, “চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, জেনারেল হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল এবং বেশ কয়েকটি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ল্যাবে আইসিইউ, হাই-ফ্লো অক্সিজেন এবং আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”
সবশেষে মেয়র বলেন, “প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো পথ। মাস্ক ব্যবহার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং হালকা উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত টেস্ট করানো—এইগুলো মেনে চললেই আমরা বড় বিপদ থেকে বাঁচতে পারবো।”