হাতীবান্ধা ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষক নিয়োগ: জামায়াত আমীরকে পদ থেকে অব্যাহতি

লুৎফর রহমান লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির হাছেন আলীর বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ ইউএনওর স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় হাছেন আলীকে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) কারণ দর্শনোর নোটিশ দিয়েছেন হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা।
অপরদিকে হাছেন আলীকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয়ার বিষয়টি জানাজানির পর বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা জামায়াতের আমির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন লালমনিরহাট জেলা কমিটি।
জামায়াত নেতা হাছেন আলী চলতি বছর ১৩ মে থেকে হাতীবান্ধা মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
জানা গেছে, হাতীবান্ধা মডেল কলেজ বেশ কিছুদিন আগে এমপিও ভুক্ত হওয়ার পরে সেখানে অধ্যক্ষের দাবিদার হাছেন আলীসহ ৪ জন। এ নিয়ে অধ্যক্ষ দাবিদার ৪ জনেই বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। ফলে সরকার ঘোষিত এমপিও’র সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কলেজটির শিক্ষক-কর্মচারীরা। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে চলতি বছর ১৩ মে উপজেলা জামায়াতের আমির হাছেন আলীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শামীম মিঞা। কিন্ত বেতন ভাতা পেতে নতুন কয়েকজনের নিয়োগ দেখিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে ১৩টি ফাইল পাঠিয়ে সেগুলোর অনুমোদন বের করেন হাছেন আলী। এতে কলেজটির সভাপতি হিসাবে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর স্ক্যান করে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ওই ১৩টি ফাইলে ইউএনও স্বাক্ষর করেননি বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শামীম মিঞা।
এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাছেন আলীকে পাঠানো হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়েছে, নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে না জানিয়ে স্বাক্ষর জাল/স্ক্যান করে ১৩টি ফাইল ইনডেক্সের জন্য প্রেরণ করেছেন মর্মে জানতে পেরেছি। আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হলো।
বিষয় স্বীকার করে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু আমি স্বাক্ষর করেনি, সেহেতু আমার স্বাক্ষর স্ক্যান করে ইনডেক্সের জন্য পাঠানো হয়েছে। সেকারণেই এটা তো জাল বলাই যায়। ওই কলেজের সভাপতি হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করছি। এ ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার পর ওই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাছেন আলীকে বৃহস্পতিবার কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। জবাব পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাছেন আলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।
এ দিকে জামায়াতের উপজেলা আমির হাছেন আলীকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয়ার পর পরেই হাতীবান্ধা উপজেলা জামায়াতের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে দলীয় ফোরামের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে হাছেন আলীকে উপজেলা জামায়াতের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং সেই সঙ্গে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি রফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আবু তাহের উপজেলা জামায়াতের আমির হাছেন আলীকে দলীয় পদ পদবী থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। কিন্তু কি কারণে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে করলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।