কালীগঞ্জে দুই সন্তানের জননীর রহস্যজনক মৃত্যু, স্বামী পলাতক

মারুফ হাসান, (কালীগঞ্জ) গাজীপুর:
গাজীপুরের কালীগঞ্জে দুই সন্তানের জননীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে । এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী ঘটনার দিন থেকে পলাতক । জানা গেছে কালীগঞ্জ উপজেলাধীন মোক্তারপুর ইউনিয়নের পোটান গ্রামে বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে । পরে ঐ দিন রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে । শুক্রবার( ৯ মে) সকালে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন ।
নিহত ওই নারীর নাম তানজিলা বেগম (২৫) তিনি মোক্তারপুর ইউনিয়নের পোটান গ্রামের মোত্তাকিনের স্ত্রী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলাউদ্দিন ।
এদিকে নিহতের পরিবারের দাবি এটা আত্মহত্যা নয় তানজিলা কে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে গলায় রশি দিয়ে সিলিং ফ্যানের আংটার সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার করছে তার স্বামীর পরিবারের লোকজন ।ঘটনার পরপরই তানজিলার স্বামী পলাতক রয়েছেন।
এলাকাবাসী জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে গৃহবধু তানজিলার সাথে তার স্বামী মোত্তাকিনের ঝগড়াঝাঁটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। দুপুরে স্থানীয় এক যুবক নিহত তানজিলার সাথে দেখা করে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। পরে ঐ দিন বিকালে তানজিলার লাশ তার বসত ঘরের সিলিং ফ্যানের আংটার সাথে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেতে পান স্থানীয়রা। মোত্তাকিনের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত গলার রশি কেটে লাশটি নামিয়ে ফেলে। পরে এলাকাবাসী থানায় খবর দিলে রাতে পুলিশ আসে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় । স্থানীয়রা আরো জানায়স্বামীর সাথে ওই নারীর পরকিয়া সন্দেহে প্রায়ই ঝগড়া হতো ।
অন্যদিকে নিহতের পরিবার দাবি করেন ঘটনাটি অর্থের বিনিময় ধামাচাপা দিতে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল নিহতের পরিবারকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছে । নিহত তানজিলার পিতা আমজাদ হোসেন বলেন,আমার মেয়ে তানজিলার গত চার বছর পূর্বে পার্শ্ববর্তী পোটান গ্রামের নজরুল ইসলামের পুত্র মোত্তাকিনের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুটি মেয়ে সন্তান হওয়ার পর থেকে স্বামী মোত্তাকিনের সাথে তানজিলার প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি হতো এবং মোত্তাকিন আমার মেয়েকে প্রায় সময়ই শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। যা একাধিকবার পারিবারিকভাবে মীমাংসা করি।সেই সময় আমার মেয়েকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে চাইলে মেয়েটা কোন অবস্থা তার স্বামী ও সন্তানদের ছেড়ে আসতে রাজি হয়নি । গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মোত্তাকিন আমাকে ফোন দিয়ে জানায় তানজিলা অসুস্থ দ্রুত এসে নিয়ে যান। আমি তাদের বাড়ীতে গিয়ে আমার মেয়েকে উঠোনের মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে মোত্তাকিনের পরিবারের লোকজন বলে তানজিলা আত্মহত্যা করেছে। তার কিছুক্ষন পর কালীগঞ্জ থানার এসআই কামরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসলে মোত্তাকিনের পরিবার স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের দিয়ে অর্থের বিনিময় তাকে ম্যানেজ করে হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য অপকৌশল করে । এ সময় তারা আমাকেও থানায় অভিযোগ না করার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে। আমার ধারণা তারা আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলাউদ্দিন বলেন,সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মোক্তারপুর ইউনিয়নের পোটান এলাকা থেকে তানজিলা নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয় । শুক্রবার সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে । নিহত তানজিলার বাবা বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযোগ দায়ের করলে একটি নিয়মিত মামলা গ্রহণ করা হয় । মামলার তদন্ত চলছে, ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে ।