সারাদেশ

গাইবান্ধার এলজিইডি’র সেই প্রকৌশলীর জব্দকৃত ৩৭ লাখ টাকা রাস্ট্রীয় কোষাগারে জমার নির্দেশ 

আশরাফুল ইসলাম গাইবান্ধা ::
গত ২১ বছরের গাইবান্ধায় এলজিইডির দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করছেন নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম। ঠিকাদারদের কাছ থেকে টেন পার্সেন্ট হারে ঘুুষ নেওয়ার  টাকা নিজ বাড়িতে নিয়ে যাবার সময় ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা সহ এলজিইডি’র গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম আটক   হলেও পরে পরিবারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
তবে জব্দকৃত টাকা রাস্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সাথে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।রোববার বিকেলে নাটোরের সিংড়া আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান এ আদেশ দেন।
এর আগে এ ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্তকারী কর্মকর্তা সিংড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু আহমেদ জব্দ করা টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ চেয়ে দুপুরে আদালতে আবেদন করেন।
 ছাবিউল ইসলাম ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় যোগদান করেন। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত টানা ১৪ বছরের বেশী সময় তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এর পর ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলজিইডি গাইবান্ধা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে থাকেন।
এ সময় তিনি সাঘাটায় উপজেলা প্রকৌশলীরও দায়িত্ব পালন করেন। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বরিশাল জেলায় যোগদান করেন। সেখানে মাত্র ২৩ দিন দায়িত্ব পালন করে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর গাইবান্ধায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে বদলী হয়ে আসেন।
সচেতন মহল বলছে, সরকারি চাকরী বিধি অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে টানা তিন বছরের বেশী থাকার কথা নয়। কিন্তু এ বিধি উপেক্ষা করে টানা ২০ বছর ধরে এক জেলাতেই ঘুরে ফিরে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডি’র গাইবান্ধার একাধিক কর্মচারী বলেন, স্যার গাইবান্ধায় ২০ বছর ধরে কর্মরত আছেন।  বিভিন্ন প্রজেক্টের নির্মান কাজে ঠিকাদারদের কাছ থেকে টেন পার্সেন্ট হারে ঘুষ নেন তিনি। ঠিকাদারেরাও  দিতে বাধ্য হন। তার চাহিদামত পিসি না দেওয়া পর্যন্ত কোনো ঠিকাদার বিল পায় না।
তারা আরও বলেন, সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবস তিনি দিনে ফিল্ড ভিজিট করেন এবং রাত ১২ টা পর্যন্ত থাকেন অফিসে। মুলতো ঠিকাদারদের কাছে টেন পার্সেন্ট হারে কমিশনের টাকা নেন রাতেই।  আমরা ছোট চাকরি করি চোখের সামনে কোটি কোটি টাকার খেলা হয়।
 কিছুই বলার নাই। অফিসের বাইরেও রিয়াজ নামে এক ছেলেকে তার নিজ অর্থায়নে একান্ত সহকারি হিসেবে রেখেছেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে ছাবিউল ইসলামের একান্ত সহকারী রিয়াজ টাকা সহ আটকের খবর শোনা মাত্র অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, স্যার কি এই বৃহস্পতিবারও বাড়িতে টাকা নিয়ে গেছেন?
এসময় তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার এলেই স্যার কিছু না কিছু টাকা নিয়ে যান। আর এ টাকাগুলো তো স্যার একাই খান না। রাজশাহীতে নেতা ও ঢাকা হেড অফিসে কিছু পাঠাতে হয় স্যারকে। আমি এইটুকু জানি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ঠিকাদার ও এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন প্রজেক্টের পিডি ও হেড অফিসের এক বড় কর্মকর্তার সাথে ছাবিউল ইসলামের সখ্যতা রয়েছে।  টেন পার্সেন্ট টাকা ঘুষ নেওয়া ছাড়াও তিনি নিজেই পাথর,বিটুমিন,ইটের খোয়া ও রড ঠিকাদারদের কাছে সাপ্লাই দেন এবং টাকার চেক দিয়ে তার পাওনা বুঝে নেন।
জানতে চাইলে প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম ঘুষ গ্রহন ও  পাথর,বিটুমিন,রড ও ইটের খোয়া ঠিকাদারদের কাছে সাপ্লাই দেওয়ার  অভিযোগ অস্বীকার করেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত  রাত  দুইটার দিকে গাইবান্ধা থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে নাটোরের সিংড়া উপজেলায় এই প্রকৌশলীর গাড়ি তল্লাশি করে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা জব্দ করেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,
সারাদেশ

আইনপুর গ্রামে পরিতোষ , সন্তোষ বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে দুর্ঘটনা ঘটে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আইনপুর গ্রামের পরিতোষ সূত্রধর ও সন্তোষ সূত্রধর বাড়িতে আগুনে দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার ০৭/০৮/২৪ ইং