শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত যশোরের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী-সাদী

জাকির হোসেন, শার্শা (যশোর) প্রতিনিধি:
দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলি ও ছুরিকাঘাতে যশোর রেলগেটের শীর্ষ সন্ত্রাসী মীর সামিল সাকিব সাদী (৩৫) অরপে খোঁড়া সাদী নিহত হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে শহরের মুজিব সড়কস্থ জয়তী সোসাইটির পিছনে এই ঘটনাটি ঘটে। সাদী ঐ এলাকার শওকত হোসেনের ছেলে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, সোমবার রাতে মোটরসাইকেলে চাচাতো ভাই রাকিবের সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশ্য যাচ্ছিলেন সাদী। বাড়ির সামনে আগে থেকে অপেক্ষায় ওতপেতে ছিলেন দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী ট্যাটু সুমন ও মেহেদী। বাসার সামনে পৌঁছাতেই সুমন ও মেহেদী সাদীকে ছুরিকাঘাত করে। এসময় সাদীর বাইকে থাকা রাকিব ট্যাটু সুমনকে জড়িয়ে ধরলে তারা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে ও রাকিবকে আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের ছোঁড়া গুলিতে সাদীর গলা ও বুকে বিদ্ধ হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা রেফার করে। ঢাকাতে নেওয়ার পথে রাত একটার দিকে সাদীর মৃত্যু হয়। মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ যশোর জেনারেল হাসপাতালে মর্গে পাঠিয়েছে।
পুলিশ বলছে, সাদী যশোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ত্রাস ম্যানসেলের প্রধান সহযোগী ও ম্যানেজার। তার নেতৃত্বে রেলগেট এলাকায় মাদকবিক্রি, চাঁদাবাজি, হাঁটবাজার ইজারার নিয়ন্ত্রণ করতেন সাদী। সাদীকে যারা হত্যা করেছে তারাও ম্যানসেলের সহযোগী। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন পর ম্যানসেল আত্মগোপনে চলে যায়। ফলে রেলস্টেশন বাজার ও রেলগেট এলাকার চাঁদার টাকা ম্যানসেলকে দেওয়া বন্ধ করে দেয় সাদী। চাঁদার টাকা না পেয়ে ম্যানসেল তার আরেক সহযোগীদের দিয়ে সাদীকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ ও স্থানীয়রা। ঘটনার পর যশোর পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হাসপাতালে, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, কারা কি কারণে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, সেটা পুলিশ তদন্ত করছে। নিহত সাদী সন্ত্রাসী ও যাদের নাম আসছে তারাও সন্ত্রাসী। সকলের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। যারা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, তাদের গ্রেফতারের অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।’
এদিকে স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর যশোর শহরের কোট মোড়ে হত্যার শিকার হন তৎকালীন জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতি কবির হোসেন পলাশ। ঐ হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন সাদী। হত্যাকান্ড ঘটিয়ে মোটরসাইকেলে পালানোর সময় শহরের অন্য প্রান্ত পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন সাদী। ঐ দুর্ঘটনার পর চিকিৎসায় তার এক পা কেটে ফেলতে হয়। এক পা হারিয়েও আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ক্ষমতার প্রভাবে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন।
সূত্র আরও জানায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যানসেলসহ তার বাহিনীর সদস্যরা গাঢাকা দেয়। সম্প্রতি তাদের কেউ কেউ আবার এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে তাদের অভ্যন্তরীণকোন্দলে সাদী খুন হলো বলে স্থানীয় সূত্রে জানিয়েছে।