সারাদেশ

কর্ণফুলীতে নিত্য যানজটে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ

প্রায় প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা টোলপ্লাজার সামনে তীব্র জট তৈরি হয়।
 ৫-৬ ঘন্টা যানজট থাকে। 
শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহর থেকে গ্রামমূখী গাড়ির তীব্র  যানযট কবলে পড়ে।
চালক ও যাত্রীদের অভিযোগ টোল আদায় করতে ধীরগতির কারণে এ যানজট সৃষ্টি হয়। 
আকাশ শীল, কর্ণফুলী প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম শহরে ও শহর থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রবেশমুখ শাহ  আমানত সেতু। এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর যাতায়াতে কম সময়ে পৌছানোর একমাত্র সড়ক। দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাড়াও কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বাসিন্দারা এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু চালু হওয়ার পর এই সড়কের ব্যস্ততা দ্বিগুণ বেড়েছে। প্রতিদিন শতশত কর্মজীবী নারী-পুরুষ এই পথে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। কিন্তু কয়েক মাস যাবত সাধারণ জনগণ ও যাত্রীদের অভিযোগ উঠেছে  মইজ্জ্যারটেক এলাকায় সেতুর টোলের দুই পাশে প্রতিদিন যানবাহনগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে শহর থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামে আসা মূখী গাড়ির সকাল  ৮ টা থেকে  ১০ পর্যন্ত যানযট থাকে, এই দিকে বিকাল ৫ টা পর থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত শহরমুখী এই যানজটের কবলে পড়ে নিত্য ভোগান্তি পোহাচ্ছেন হাজারো যাত্রী।
এ যানজটের কারণে যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্সের রোগী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার। সাধারণ যাত্রী থেকে ব্যবসায়ী—সবারই অভিযোগ, টোল আদায়ের ধীরগতি, অব্যবস্থাপনা এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই যানজট সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
এইদিকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এইদিকে বিকাল রাত পর্যন্ত দীর্ঘ সময় যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর মইজ্জ্যারটেক টোল এলাকা। দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় যেতে হলে পার হতে হয় এই সেতু দিয়ে।  চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের এ সেতুতে যানজটের কারণে  ঘণ্টার পর ঘণ্টা শত শত যানবাহনকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়
 স্থানীয় সূত্র, চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ৮ টার পর শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় যানজট শুরু হয়ে দুপুর ১০ টা পযর্ন্ত চট্টগ্রাম শহর থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামুখী
এবং বিকাল ৫ টা থেকে রাত অব্দি শহরমুখী লেনে, প্রতি শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্রামমুখী আসা যানজটের কবলে পড়ে যানবাহনগুলো।
তবে টোল কতৃপক্ষ বলছে ভিন্ন,  তারা যানজটের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, মোটর রিকশা   অটোরিকশার আধিক্য, চালকরা শৃঙ্খলা না মানা, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ। অনেক গাড়ির নম্বর প্লেট ঢেকে রাখা হয়। বিভিন্ন ,চালকরা টোল আদায়ে বড় টাকার নোট দেওয়া, ছোট গাড়ি বেশি, সন্ধ্যা হলে কারখানার ছুটি। এছাড়াও বন্ধের দিনে যানজট হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বেড়ে যায়, কক্সবাজার, বান্দরবান, পারকি সমুদ্র সৈকতসহ ওই সেতু ব্যবহার করে  বিনোদনপ্রেমীদের ভিড়।
স্থানীয়রা বলছেন, টোলপ্লাজায় যানজট কমাতে অন্তত আরও চারটি লেন বাড়ানো দরকার। সেই সঙ্গে ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির শৈথিল্যের কারণেই অটোরিকশার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।” এই যানজটের কারণে রোগী নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসনাইন কাজেমি নামের এক যাত্রী বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ। এই ব্রিজ দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ  কক্সবাজার, টেকনাফ, জেলার শত শত যাত্রী প্রতিদিন চট্টগ্রাম সহ দূর-দূরান্তের গন্তব্যে আসা যাওয়া করে স্বাভাবিকভাবেই শহর থেকে ব্রিজের মুখে গোলচত্বরে এবং মইজ্জ্যারটেক চত্বর অবৈধভাবে পার্কিং ও যাত্রী উঠানামার কারণে এমন যানবাহনের চাপ পড়ে বলে আমি মনে করি,  পাশাপাশি ব্রীজের দুই মুখে ট্রাফিক ব্যবস্থার জোরদার করার কথা জানান।
আবু তালেব বকুল নামের এক যাত্রী বলেন, মইজ্জ্যারটেক যানযট এখন নিত্যদিনের, এই যানজটের কারণে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় শিশু-বৃদ্ধ ও রোগীদের। রোডে ফিটনেসবিহীন অসংখ্য লোকাল বাসের যএতএ দাড়িঁয়ে যাত্রী উঠানামা করার কারণে প্রতিদিন যানজটের শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। টোল কতৃপক্ষকে টোল আদায় আরো সচেতন হতে হবে যাতে গাড়ি বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে না হয়।
চাকুরীজীবি মুন্না বলেন, আমরা প্রতিদিন এই ব্রীজ দিয়ে আশা যাওয়া করে থাকি কিন্তু কয়েক মাস ধরে সকাল অফিসে যাওয়ার সময় আর সন্ধ্যায় আসার সময় টোল প্লাজার এলাকায়  দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়, টোল কতৃপক্ষে দৃষ্টি  এ সমস্যার সমাধান করেন যাতে আমাদের এ ভোগান্তিতে পড়তে না হয়
বাস চালক আবদুল মালেক বলেন,”প্রায় প্রতিদিনই সকাল-বিকেল টোলপ্লাজার সামনে তীব্র জট তৈরি হয়। টোল আদায়কারী ছয়টি লেন চালু থাকলেও, ধীরগতির কারণে গতি কমে যায়। সেতুর দুই প্রান্তেই এমনিতেই জ্যাম লেগে থাকে, তার উপর টোল আদায়ের সময়ও বাড়তি বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়।
সিএনজি ড্রাইভার ফয়জুল করিম বলেন, আগে শহর থেকে গ্রামে সহজে ভাড়া নিতাম কিন্তু এখন ভাড়া নিতে বা আনতে ইচ্ছে করে না কারণ টোল প্লাজা জায়গায় ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়তে হয়।
কালুরঘাট সেতু বন্ধ থাকায় সব গাড়ির চাপ শাহ আমানত সেতুতে এসে পড়ছে বলেও অনেকের দাবি। দ্রুত নতুন সেতু ও বিকল্প পথের ব্যবস্থা না করা হলে যানজটের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়বে বলে অনেকে মনে করছেন
 সরেজমিনে সেতু এলাকায় দেখা যায়, সন্ধ্যারপরে  সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে টোলের একপাশে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনের সারি সারি মইজ্জ্যারটেক আবাসিক এলাকা পর্যন্ত গাড়ির লাইন ছাড়িয়ে যায়। ছুটির দিন শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টোল থেকে শাহ আমানত সেতুর মাঝখান পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে।
টোলে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি
জাহাঙ্গীর জানান, আগের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেড়েছে, প্রতিদিন সকালে শহর থেকে চাকরিজীবিরা ও সন্ধ্যায় ছুটির পরে যানবাহন বেড়ে যায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বেড়ে যায়। ফলে যানবাহনের চাপও বাড়ে। অনেকে নিয়ম না মেনে আগে যাওয়ার প্রতিযোগীতায় নামে, ব্রীজের ঐ পাড়ে (চাকতাই) রাস্তার পাশে এবং এ পাড়ে মইজ্জ্যারটেক চত্বরে যএতএ পার্কিংটা কমাতে পারলে  যানজট সৃষ্টি হবে না।
টোলে দায়িত্বে থাকা আনসার বাহিনি শাওন বলেন,  শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটিতে ও  প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা  যানযট হয়। অনেক সময় নতুন ব্রীজ(চাকতাই) যানযট এপারে চলে আসে তবে আমরা যথেষ্ট করি যাতে ইমারজেন্সি গাড়ি যেমন ফায়ারসার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্সেরসহ তাড়াতাড়ি চলে যেতে পারে সে ব্যবস্হা করে থাকি। এবং ড্রাইভারা যাতে খুচরা টাকা দেন সেজন্য মাইকিং লাগানো হয়েছে।
মইজ্জ্যারটেক এলাকার ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) আবু সাঈদ বাকার বলেন, এই রুটে যানবাহনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আমাদের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন যানজট নিয়ন্ত্রণ রাখতে। নতুন করে ট্রাফিক পুলিশ বক্স নির্মাণের কাজ চলছে। তবুও গাড়ির চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”
শাহ আমানত সেতুর টোলপ্লাজার ইজারাদার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কোম্পানি সেল-ভ্যান জেভি’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুমন ঘোষ বলেন,”বর্তমানে শাহ আমানত সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৭ হাজারেরও বেশি গাড়ি চলাচল করছে। যদিও ৮টি লেন দিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে, কিন্তু বিশেষ ছুটির দিনে চাপ বেড়ে যায়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ইতোমধ্যে দু’পাশে রাস্তা বর্ধিতকরণের পরিকল্পনা নিয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং কাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে আশাবাদী এবং দু’পাশে রাস্তা বর্ধিতকরণ হয়ে গেলে আশাকরি এ ধরণের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

You may also like

সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,
সারাদেশ

আইনপুর গ্রামে পরিতোষ , সন্তোষ বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে দুর্ঘটনা ঘটে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আইনপুর গ্রামের পরিতোষ সূত্রধর ও সন্তোষ সূত্রধর বাড়িতে আগুনে দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার ০৭/০৮/২৪ ইং