সারাদেশ

টিটিসিতে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ, দুর্নীতি ঢাকতে ফেইসবুকে সাংবাদিকদের নিয়ে কটাক্ষ অধ্যক্ষের

মোঃ ইলিয়াস আলী, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার নামে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁও সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’র (টিটিসির) বিরুদ্ধে। যা দুদকে অনুসন্ধান চলমান। গেল মাসের বৃহস্পতিবার (২৯ মে) লাইসেন্স দেওয়ার নামে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয় টিটিসি এমন অভিযোগের কথা নিশ্চিত করেন ঠাকুরগাঁও সমন্বিত কার্যালয় দুদক।
এ নিয়ে বেশকিছু সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আর এমন সংবাদ প্রকাশের পর জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেইসবুকে) প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান ও খণ্ডকালীন প্রশিক্ষক ফারুক হোসেন ও অটোমোটিভ ট্রেডের প্রধান প্রশিক্ষক সাদেকুল ইসলামের চাকরিচুত্য ও অনিয়মের অপরাধের আইনের আওয়াতায় এনে কঠোর শাস্তি দাবি জানান নেটিজনসহ প্রশিনার্থীরা।
নামপ্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থীও জানায়, পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ঠাকুরগাঁও সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগদান করেন শামছুর রহমান। অনিয়মকে তিনি নিয়মে পরিনত করেছেন। ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য খাতে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে তার পরেও তিনি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান ও আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে এর আগেও অনিয়মের প্রতিবাদ করেছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের আশীর্বাদে সব অনিয়ম ক্ষমা পেয়ে যায়। এখনো তিনি আগের মতোই অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছেন। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিকগণ।
তবে এরইমধ্যে দেখা গেছে, নিজের অনিয়ম ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বাঁচাতে সম্প্রতি, ঠাকুরগাঁও সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান তার নিজস্ব ফেইসবুকে জেলার গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেন। যা গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিবাদের ঝড় তোলে। একই সাথে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের উর্ধ্বতনদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তিনি তার নিজস্ব ফেসবুকে লিখেন, সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ঠাকুরগাঁও টিটিসির কয়েকজনের প্ররোচনায় অর্থের লোভে, কয়েকজন হলুদ সাংবাদিক ফেইসবুক/অনলাইন পত্রিকায় সম্পূর্ণ মিথ্যে, বানোয়াট সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁও টিটিসির কয়েকজন চিহ্নিত ব্যাক্তির স্বার্থে আঘাত লাগায় প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য কয়েকজন হলুদ সাংবাদিক দিয়ে এই ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ করাচ্ছে। তাদের গ্রুপের একজনকে বিএমইটি কর্তৃক তদন্তের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করে মানিকগঞ্জ টিটিসিতে কিছুদিন হলো বদলী করেছে।
ড্রাইভিং কোর্সে প্রশিক্ষণাথীদের নিকট থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানামতে সম্পূর্ণ মিথ্যে এবং বানোয়াট। টিটিসি কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণ ব্যাতিত কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় না। অতএব, ড্রাইভিং লাইসেন্স বাবদ টিটিসির পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণার্থীদের নিকট থেকে টাকা নেয়ার প্রশ্ন তোলা বা টিটিসি কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তক।
অথচ গেল কয়েক বছর ধরে লাইসেন্স বাবদ প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছে ঘুষ হিসেবে ২৫০০ টাকা করে নিয়ে আসছে টিটিসি কর্তৃপক্ষ। এতে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও ভয়ে মুখ খুলেনি কেউ।
তবে প্রতিবাদ স্বরুপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেইসবুক) এক পোষ্টে মন্তব্য করেন টিটিসি’র দেলোয়ার হোসেন নামে ইলেকট্রনিক্স বিভাগের এক প্রশিক্ষক। এতে নড়ে চড়ে বসে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অনেকে। খবরটি ছড়িয়ে পরে প্রশাসনিক দপ্তরগুলোতেও।
তবে এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানানো প্রশিক্ষক দেলোয়ার হোসেনকে গেল (১৭ মে) শোকজ করেন প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান।
এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিজেদের অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতেই তারা সকলেই একত্রিত হয়ে আমাকে শোকজ করেছে। তবে আমি যা সত্য তাই বলেছি। দুদক তদন্ত করলেই সব বেড়িয়ে আসবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী জানান, ঠাকুরগাঁও সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি’র) ৭০ জন প্রশিক্ষণার্থী তিন মাসের একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন এবং তাদের প্রত্যেকের কাছে ২৫০০ টাকা লাইসেন্স দেওয়া হবে মর্মে টিটিসি কর্তৃপক্ষ আদায় করে। এরইমধ্যে দুদকের কর্মকর্তারা তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নেমেছে।
পরবর্তীতে খোজ নিয়ে জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের নামে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছে থেকে ৪ হাজার টাকা করে চাওয়া হয়। ভারি যানবাহনের জন্য ৩৫০০ ও হালকা যানের জন্য ২৫০০ টাকা নেয় দেশ-বিদেশের খণ্ডকালীন প্রশিক্ষক ফারুক হোসেন। যারা টাকা দিয়েছে তারাই শুধু লাইসেন্স প্রাপ্তি পরীক্ষায় পাস করেছে। আর যারা দেয়নি তাদের অকৃতকার্য দেখনো হয়।
তিনি আরও বলেন, লাইসেন্স দেয়া বাবদ প্রশিক্ষণার্থীর কাছে টাকা নিয়েছি টিটিসি কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগে দুদক  কাজ করছে। আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সংবাদ প্রচার ও দুদকের বক্তব্যের পর কৌশলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমান ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার নামে কোনো অর্থ নেওয়া হয়নি মর্মে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছে একটি লিখিত নেন।
অন্যদিকে, কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী অভিযোগ করে জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ঘুষ না দিলে অকৃতকার্য করা হতো। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলে এটাও নিয়মিত দেন না কর্তৃপক্ষ। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ২/৩ লিটার তেল বরাদ্দ থাকলেও টিটিসি কর্তৃপক্ষের আমাদের জন্য আধা লিটার তেলও খরচ করে না। তারা প্রতিটি কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছে যা দেখার কেউ নেই। এখানে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে হরিলুট চলে। আমরা মনে করি প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কিভাবে হয়েছে তা সঠিক তদন্ত প্রয়োজন। সরকারের ঊর্ধ্বতনরা সঠিক তদন্ত করলেই সব বেড়িয়ে আসবে। আর প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক দেলোয়ার হোসেন যা বলেছে তা সম্পূর্ণ সত্য।
এবিষয়ে ঠাকুরগাঁও সরকারী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি’র) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামছুর রহমানের সাথে একাধিকাবার যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে আর কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। সাংবাদিকদের কোন বক্তব্য দিবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like

সারাদেশ

বদলে যাচ্ছে র‌্যাব: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক

নতুন রূপে আসছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ বাহিনীর নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়,
সারাদেশ

আইনপুর গ্রামে পরিতোষ , সন্তোষ বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে দুর্ঘটনা ঘটে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আইনপুর গ্রামের পরিতোষ সূত্রধর ও সন্তোষ সূত্রধর বাড়িতে আগুনে দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার ০৭/০৮/২৪ ইং