সিরাজগঞ্জে সেতুর কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার

ওয়াসিম সেখ, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে কাটাখালী নদ। স্থানীয়রা এটিকে ‘কাটাখালী’ নামেই চেনেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে নদের বাহিরগোলা বাজার এলাকায় ৭ কোটি ২৮ লাখ ২ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সে অনুযায়ী ওই বছরের ১৮ আগস্ট শুরু হয় নির্মাণকাজ। চলতি বছরের জুনের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ ফেলে ছয় মাস ধরে লাপাত্তা ঠিকাদার।
পাউবো সূত্র জানায়, ২০২১ সালের জুলাইয়ে ৮ কোটি ৮ লাখ ৯১ হাজার টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের কাজটি ৭ কোটি ২৮ লাখ ২ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয় মইনউদ্দিন (বাশি) লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। ওই বছরের ১৮ আগস্ট শুরু হয় সেতুটির নির্মাণকাজ। এ কাজের শুরুতে দুই কোটি ৬৮ লাখ টাকার বিলও পরিশোধ করা হয়। তবে কাজ শেষ না করেই পালিয়েছেন ঠিকাদার।
সরেজমিন দেখা যায়, সেতুর দুই পাশের পিলারের কিছু কাজ হয়েছে। তবে পাটাতনের কাজ হয়নি। পিলার-পাটাতন থেকে রড বেরিয়ে আছে। এখন শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নদে তেমন পানি নেই। আশপাশের লোকজন রেলের পরিত্যক্ত একটি সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।
স্থানীয় আলী আশরাফ নামে নির্মাণাধীন ব্রিজের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা বলেন, ‘২০২১ সালে কাজটি শুরু হলেও ঠিকাদার প্রথম থেকে খুব ধীরগতিতে কাজ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো তদারকি করেনি। এ বছর কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা না হয়ে এখন নির্মাণকাজই বন্ধ রয়েছে। এতে নতুন ভাঙ্গাবাড়ি, জানপুর, রানী গ্রাম, খোকশাবাড়ি, ছোনগাছা, পাঁচঠাকুরী, কাজীপুরসহ প্রায় ২৫ গ্রামের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
তিনি আরও বলেন , ‘ব্রিজটির কাজ শেষ না হওয়ায় এলাকার নারী, পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা অনেক দিন ধরে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। অনেক সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে অসুবিধায় পড়তে হয়। এ ছাড়া অসম্পূর্ণ কাজের কারণে চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
নুরুন্নবী নামে স্থানীয় আর এক বাসিন্দা বলেন, যে ঠিকাদার কাজটি পেয়েছিল, সেই ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখে পালিয়েছেন। আমাদের এখন যাতায়াত করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। সরকারের কাছে দাবি, ব্রিজটি যেন দ্রুত সম্পন্ন করে দেওয়া হয়। ব্রিজটি না থাকায় কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে।ব্রিজটি হলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হতো। সবাই অপেক্ষায় আছি, কবে শেষ হবে ব্রিজের কাজ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাটাখালীর একদিকে জানপুর, রানীগ্রাম ও চন্দ্রকোনা গ্রাম; অন্যদিকে এসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের শহরে প্রবেশের একমাত্র মাধ্যম এই নদ। কিন্তু সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে তুলতে নিত্যদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন কাজ না হওয়ায় লোহার রডগুলোতে মরিচা পড়ে গেছে। রাতে রড চুরির ঘটনাও ঘটছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, সেতুটি নির্মাণের মেয়াদ জুনেই শেষ হয়ে গেছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া কাটাখালী নদে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নদীর দুই পারের প্রায় ২৫ গ্রামের মানুষ। ২০২১-২২ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে ৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু হলেও তা আজও সম্পন্ন হয়নি।
কাজের ধীরগতি ও ঠিকাদারের লাপাত্তা
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট মইনউদ্দিন (বাশি) লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু করে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। শুরুতে কাজের জন্য দুই কোটি ৬৮ লাখ টাকা বিলও দেওয়া হয়। তবে ছয় মাস আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে উধাও হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর কিছু পিলারের কাজ হলেও পাটাতন নির্মাণ হয়নি। লোহার রডগুলো খোলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে, যেখানে মরিচা পড়তে শুরু করেছে। স্থানীয়রা পরিত্যক্ত রেলসেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদ পারাপার করছেন।
দুর্ভোগে গ্রামবাসী
স্থানীয় বাসিন্দা আলী আশরাফ বলেন, “সেতুর কাজের ধীরগতির কারণে জানপুর, রানীগ্রাম, খোকশাবাড়ি, পাঁচঠাকুরীসহ ২৫ গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে আছেন। নারীরা, বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা, দ্রুত চিকিৎসা পেতে অসুবিধায় পড়ছেন। এছাড়া উৎপাদিত ফসল বাজারে তুলতে ঘুরপথে যেতে হচ্ছে, যা সময় ও খরচ বাড়াচ্ছে।”
আরেক বাসিন্দা নুরুন্নবী বলেন, “ঠিকাদার কাজ শেষ না করেই পালিয়েছে। সেতুটি না থাকায় যাতায়াতে কষ্ট ও অর্থ নষ্ট হচ্ছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, দ্রুত কাজ শেষ করে আমাদের এই ভোগান্তি দূর করা হোক।”
চুরি ও অবহেলার অভিযোগ
দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় সেতুর নির্মাণসামগ্রী চুরি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। নদীর দুই পাড়ের মানুষের শহরে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই সেতুটি। ফলে নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ফসল পরিবহন ও নিত্যদিনের যাতায়াতে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
পাউবোর ব্যাখ্যা
পাউবো সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, “ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। তাদের ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেতুটি দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে।”
স্থানীয় জনগণ অপেক্ষায় রয়েছেন, কবে সেতুর কাজ শেষ হবে এবং তারা এই দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন।